Wednesday 20 September 2023

গোসলের পূর্বে উযূ করা উচিত।

গোসলের পূর্বে উযূ করা উচিত।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ কিন্তু যদি তোমরা অপবিত্র থাক তবে উত্তমরূপে পবিত্র হবে। আর যদি তোমরা পীড়িত হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা সেরে আসে কিংবা তোমরা স্ত্রী সহবাস কর, তারপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে-ঐ মাটি দিয়ে নিজেদের মুখমন্ডল ও হাত মাসহ(মাসেহ) করে নিবে। আল্লাহ্ তোমাদের অসুবিধায় ফেলতে চান না, বরং তিনি তোমাদের পাক-পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর নিয়ামাত পূর্ণ করতে চান, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরাহ্ আল-মায়িদাহ্ ৫/৬)

 

হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নেশায় মত্ত অবস্থায় সালাতের কাছেও যেও না যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার; আর অপবিত্র অবস্থায় নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা গোসল কর, তবে মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র। আর যদি তোমরা অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে অথবা তোমরা স্ত্রী সহবাস করে থাক এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নাও- মাসেহ করবে স্বীয় মুখমন্ডল ও হাত। নিশ্চয় আল্লাহ্ হলেন অতিশয় মার্জনাকারী, পরম ক্ষমাশীল। (সূরাহ্ আন-নিসা ৪/৪৩)

 

আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাবাতের গোসল করতেন, তখন প্রথমে তাঁর হাত দুটো ধুয়ে নিতেন। অতঃপর সালাতের উযূর মত উযূ করতেন। অতঃপর তাঁর আঙ্গুলগুলো পানিতে ডুবিয়ে নিয়ে চুলের গোড়া খিলাল করতেন। অতঃপর তাঁর উভয় হাতের তিন আজলা পানি মাথায় ঢালতেন। তারপর তাঁর সারা দেহের উপর পানি ঢেলে দিতেন। (২৬২, ২৭২; মুসলিম ৩/৯, হাঃ ৩১৬, আহমাদ ২৫৭০৪)

 

মাইমূনাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের উযূর ন্যায় উযূ করলেন, পা দুটো ব্যতীত এবং তাঁর লজ্জাস্থান ও যে যে স্থানে নোংরা লেগেছে তা ধুয়ে নিলেন। অতঃপর নিজের উপর পানি ঢেলে দেন। অতঃপর সেখান হতে সরে গিয়ে পা দুটো ধুয়ে নেন। এই ছিল তাঁর জানাবাতের গোসল। (মুসলিম ৩/৯, হাঃ ৩১৭, আহমাদ ২৬৮৬১)

 

স্বামী-স্ত্রীর এক সাথে গোসল প্রসঙ্গে ‘আয়িশাহ্ (রাযি.)  বলেনঃ আমি ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্র (কাদাহ) হতে (পানি নিয়ে) গোসল করতাম। সেই পাত্রকে ফারাক বলা হতো। ( মুসলিম ৩/১০, হাঃ ৩১৯, আহমাদ ২৫৮৯৪)

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসলের সময়  নিজের মাথায় তিনবার পানি ঢালতেন।

 

আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাবাতের গোসল করতেন, তখন হিলাবের অনুরূপ পাত্র চেয়ে নিতেন। তারপর এক আজলা পানি নিয়ে প্রথমে মাথার ডান পাশ এবং পরে বাম পাশ ধুয়ে ফেলতেন। দুহাতে মাথার মাঝখানে পানি ঢালতেন। (মুসলিম ৩/৯, হাঃ ৩১৮)

আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্রের পানি দিয়ে এভাবে গোসল করতাম যে, তাতে আমাদের দুজনের হাত একের পর এক পড়তে থাকতো। (২৫০; মুসলিম ৩/১০, হাঃ ৩১৯, ৩২১)

 

আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাবাতের গোসল করতেন, তখন তিনি দুহাত ধৌত করতেন এবং সালাতের উযূর মত উযূ করতেন। তারপর গোসল করতেন। পরে তাঁর হাত দিয়ে চুল খিলাল করতেন। চামড়া ভিজেছে বলে যখন তিনি নিশ্চিত হতেন, তখন তাতে তিনবার পানি ঢালতেন। তারপর সমস্ত শরীর ধুয়ে ফেলতেন।

 

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বনী ইসরাঈলের লোকেরা নগ্ন হয়ে একে অপরকে দেখা অবস্থায় গোসল করতো। কিন্তু মূসা (‘আঃ) একাকী গোসল করতেন। এতে বনী ইসরাঈলের লোকেরা বলাবলি করছিল, আল্লাহর কসম, মূসা (‘আঃ) ‘কোষবৃদ্ধি রোগের কারণেই আমাদের সাথে গোসল করেন না। একবার মূসা (‘আঃ) একটা পাথরের উপর কাপড় রেখে গোসল করছিলেন। পাথরটা তাঁর কাপড় নিয়ে পালাতে লাগল। তখন মূসা (‘আঃ) “পাথর! আমার কাপড় দাও,” “পাথর! আমার কাপড় দাও, বলে পেছনে পেছনে ছুটলেন। এদিকে বাণী ইসরাঈল মূসার দিকে তাকাল। তখন তারা বলল, আল্লাহর কসম মূসার কোন রোগ নেই। মূসা (‘আঃ) পাথর থেকে কাপড় নিয়ে পরলেন এবং পাথরটাকে পিটাতে লাগলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, পাথরটিতে ছয় কিংবা সাতটা পিটুনীর দাগ পড়ে গেল।

 


আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি আরো বলেন যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
 সাল্লাম) বলেছেনঃ' এক সময় আইয়ুব (‘আঃ) বিবস্ত্রাবস্থায় গোসল করছিলেন। তখন তাঁর উপর সোনার পঙ্গপাল বর্ষিত হচ্ছিল। আইয়ুব (‘আঃ) তাঁর কাপড়ে সেগুলো কুড়িয়ে নিচ্ছিলেন। তখন তাঁর রব তাঁকে বললেনঃ হে আইয়ুব! আমি কি তোমাকে এগুলো হতে অমুখাপেক্ষী করিনি? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ, আপনার ইয্‌যতের কসম। অবশ্যই করেছেন। তবে আমি আপনার বরকত হতে বেনিয়ায নই।'

 

লোকের সামনে গোসলের সময় পর্দা করা উচিৎ।  এ প্রসঙ্গে মাইমূনা (রাঃ) বলেনঃ 'আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য পর্দা করেছিলাম আর তিনি জানাবাতের গোসল করছিলেন।'

 

উম্মুল মুমিনীন উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আবূ তালহা (রাঃ) এর স্ত্রী উম্মু সুলায়ম (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খিদমাতে এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ্ তাআলা হকের ব্যাপারে লজ্জা করেন না। স্ত্রীলোকের ইহ্‌তিলাম (স্বপ্নদোষ) হলে কি ফরয গোসল করবে? আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হাঁ, যদি তারা বীর্য দেখে।

 

আবদুল্লাহ ইব্‌নু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ উমর ইব্‌নুল খাত্তাব (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, রাতে কোন সময় তাঁর গোসল ফরয হয় (তখন কী করতে হবে?) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ উযূ করবে, লজ্জাস্থান ধুয়ে নিবে তারপর ঘুমাবে।

 


খন্দকার নাজনীন সুলতানা ,

লেখক, সাংবাদিক।

No comments:

Post a Comment