Monday 26 August 2013

যুলকার নাইন, এস্কান্দার ও সেকান্দরের প্রাচীর


যুলকার নাইন একজন খোদাভক্ত ও ন্যায়পরায়ন বাদশাহ ছিলেন। তাঁর প্রতি আল্লাহ তা’য়ালার বিশেষ বানীও এসেছিল বলে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে। নবী করীম (সাঃ) এর যুগের প্রায় আড়াই বৎসর পূর্বে ইব্রাহীম (আঃ) এর সময় এস্কান্দার নামে এই বাদশাহ ছিলেন। পবিত্র কোরআনে বর্নিত গুনাবলী অনুযায়ী সেই এস্কান্দর নামক বাদশাহ ও যুলকার নাইন বাদশাহ একই ব্যক্তি।


 বাদশাহ যুলকার নাইন এর নীতি ছিল, যে অন্যায়কারী তথা কাফের থাকবে, তাকে ইহজগতে শাস্তি দেয়া হবে। তারপর মৃত্যুর পর আল্লাহও তাকে কঠোর শাস্তি দেবেন। আর যে ঈমান আনবে ও নেক আমল করবে, সে এই পৃথিবীতে পাবে ভালো ব্যবহার ও উত্তম পুরস্কার আবার পরকালেও তার জন্য রয়েছে অত্যান্ত আকর্ষনীয় প্রতিদান।

একবার যুলকার নাইন এক অভিযানে দুটি পর্বত প্রাচীরের মধ্যস্থ এক স্থানে পৌঁছালেন। তখন সেই পর্বতদ্বয়ের পাদদেশে এক মানব সমাজ পেলেন, যারা তার ভাষা বুঝতো না। দোভাষীর মাধ্যমে তারা জানালো যে, ‘ইয়াজুজ মাজুজ নামে এক জাতি প্রায়ই তাদের অঞ্চলে এসে ভীষন ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি প্রাচীর তৈরী করে দিলে তাদের অনেক উপকার হবে।  যুলকার নাইান বলল, ’আল্লাহ আমাকে ধন-দৌলতের যে সামর্থ দিয়েছেন, তাই যথেষ্ট। তোমরা শুধু শ্রমশক্তি দ্বারা আমাকে সাহায্য করো। তবে তোমাদের ও তাদের মাঝে একটি মজবুত প্রাচীর তৈরী করে দেই’।

তারা বড় বড় লোহার পাত দিয়ে পর্বত দুটির মাঝের গিরি পথটি ভরাট করে পাহাড়ের সমান করলো। তরপর আগুন জ্বালালো। যখন লোহাগুলো প্রচন্ড উত্তপ্ত হলো তখন গলিত তামা সেই লোহাগুলোর উপর ঢেলে দিল। ভীষন মজবুত ও উচু এই প্রাচীরটি ইয়াজুজ- মাজুজের পক্ষে উপরে চড়ে অতিক্রম করা সম্ভব হবে না। আবার ভেঙ্গে পথ সৃষ্টি করাও সম্ভব নয়। তবে কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে আল্লাহর হুকুমেই ইয়াজুজ - মাজুজ প্রাচীরটি ভেদ করে বেরিয়ে আসতে পারবে।

অষ্ট্রেলিয়ার উত্তর পূর্ব সীমান্তে সমুদ্র উপকূলে এক প্রাচীন প্রাচীর আছে। যা লম্বায় এক হাজার মাইলেরও বেশী। চওড়া বারো মাইল। উঁচু এক হাজার ফুট। এর উপর অনেক রকম জীব জন্তু বাস করে। বৈজ্ঞানিকরা এখনও এর তথ্য অনুসন্ধান করছে। অনেকের ধারনা এই প্রাচীরটিই যুলকারনাইনের দ্বারা প্রস্তুত লোহা ও তামার প্রাচীর। এর নামই যুলকার নাইন, এস্কান্দার বা সেকান্দরের প্রাচীর।

নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ইয়াজুজ মাজুজ দল প্রতিদিন এই প্রাচীর খনন করে। সারাদিন খনন করার পর যখন তা ভেদ করতে আর অল্প একটু বাকী থাকে তখন দলপতির আদেশে তারা কাজ বন্ধ করে চলে যায়। সেই তখন থেকে এখন পর্যন্ত তারা এরূপ কাজ করে আসছে। যখন কেয়ামতের কাছাকাছি সময় আসবে, তখন সারা দিনের কাজ শেষে দলনেতা বলবে, ‘ইনশাহ-আল্লাহ আগামীকাল আমরা বাকীটুকু খনন করবো। তখন আল্লাহর কুদরতে ও ইনশাহ-আল্লাহর বদৌলতে খননকৃত স্থান ভরাট হবে না। পরদিন তারা অতি সহজেই অবশিষ্ট খননকার্য সমাধা করে, তা ভেদ করে প্রবল স্রোতের ন্যায় সবাই বেরিয়ে আসবে। কোরআনের ঘোষনা তখন বাস্তবে পরিণত হবে।

আল্লাহ তা’য়ালার অনেক সৃষ্টি এখনও মানুষ আবিস্কার করতে পারেনি। যেমন: যুলকারনাইন নির্মিত প্রাচীর। শাদ্দাদ কর্তৃক নির্মিত বেহেশত ও দজ্জাল। আল্লাহর কুদরতে এখনও এসব সাধারন দৃষ্টি হতে লুকায়িত রয়েছে। তবে আল্লাহর ইচ্ছা ও ক্ষমতায় কেউ কেউ এসব গোপন প্রাচীর বেহেশত ও দজ্জাল দেখেছিলেন। হাদীসে এর প্রমাণও মেলে।

একদা এক সাহাবী নবী করীম (সাঃ) এর খেদমতে এসে আরজ করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি যুলকার নাইনের প্রাচীর দেখেছি।’ লোকটির বর্ননা অনুযায়ী প্রাচীরটি ডোরা বিশিষ্ট চাদরের ন্যায়। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ঐ সাহাবীর বক্তব্য সমর্থন করে বললেন, ‘বাস্তবিকই তুমি তা দেখেছ।

 মুসলিম শরীফের হাদীস অনুযায়ী দজ্জালের জন্ম বহু পূর্বেই হয়েছে। কিন্তু তাকে সাধারণ দৃষ্টি আবিস্কার করতে পারেনি। তামীমে দারী (রাঃ) নামে এক সাহাবী তাকে দেখেছিলেন। কেয়ামত নিকটবর্তী হলে দজ্জালেরও আর্বিভাব হবে।

আবার নবী করীম (সাঃ) এর ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী মোয়াবিয়া (রাঃ) এর শাসন কালে এক ব্যক্তি নিজ উট হারিয়ে তালাশ করতে করতে হঠাৎ শাদ্দাদের বেহেশত দেখতে পেয়েছিলেন। জ্বীনদের দ্বারা এরূপ অনাবিস্কৃত স্থানে মানুষের ভ্রমন অনেক ক্ষেত্রেই ঘটেছে। তাই এ ঘটনাগুলো হয়তো আল্লাহর রহস্যময় কুদরতে জ্বীনদের দ্বারা হঠাৎ ভ্রমণের ব্যবস্থা হয়েছিল।
---------------------------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র:
আলকোরআন: পারা; ১৭, রুকু-৭। বুখারী শরীফ; হাদীস নং ১৬২৬, ১৬২৭, মুসলিম শরীফ, ইবনে মাজা শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ফাতহুল বারী, তফসীরে আজীজী।
--------------------------------------------------------------------------------
প্রকাশ ঃ দৈনিক ইনকিলাব; ৯ ফেব্র“য়ারী ২০০৯।  
-----------------------------------------------------------------------------------

By
Khandaker Nazneen Sultana
Journalist

No comments:

Post a Comment