Friday 30 August 2013

হযরত সালেহ (আঃ) ও আল্লাহর উষ্ট্রী


 হযরত সালেহ (আঃ) সামুদ জাতির জন্য পয়গম্বর নিয়োজিত হয়েছিলেন। তাঁর জাতি মদীনা ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে বসবাস করতো। হুদ (আঃ) এর উম্মত আ’দ জাতি যখন আল্লাহ তা’য়ালার গজবে পড়ে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, তখন হুদ (আঃ) এবং তাঁর অনুসারী মোমেনগন আল্লাহর অশেষ রহমতে রক্ষা পেয়েছিলেন। তারাই পরবর্তীকালে সামুদ জাতি হিসেবে পরিচিত হয়েছেন।

সামুদ জাতি পার্থিব সভ্যতায় বেশ উন্নত ও প্রগতিশীল ছিল। তারা ‘ওয়াদিল কুরা’ নামক এলাকায় পাহাড়-পর্বতের ভিতরে, উপরে ও সমতলভূমিতে সুরম্য প্রসাদ নির্মান করতো। কালের বিবর্তনে যখন সামুদ জাতি এক আল্লাহর এবাদত বন্দেগী ত্যাগ করে পৌত্তলিকতায় এবং মূর্তি পূজায় লিপ্ত হলো, তখন সালেহ (আঃ) তাদের মাঝেই জন্ম গ্রহন করলেন এবং তাদের জন্য নবীরূপে মনোনীত হলেন।


সামুদ বংশীয় লোকজন অনেক আরামে থেকেও আল্লাহ তা’য়ালাকে বিশ্বাস
করতো না। অসহায় দরিদ্রদের উপর অত্যাচার করতো। তাদেরকে গো-চরনভূমি ও জলকূপ হতে বঞ্চিত করতো। 

সালেহ (আঃ) সামুদ জাতির লোকদের বলেছিলেন, ‘হে আমার উম্মত, তোমরা এক আল্লাহর বন্দেগী কর। তিনি ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নাই। তিনি আমাদেরকে মাটি থেকে পয়দা করেছেন। ধন-দৌলত, রিযিক দিয়েছেন। আল্লাহকে ছাড়া অন্য কারো পূজা করা মহাপাপ। অতএব তোমরা আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আল্লাহ অসীম দয়ালু। তিনি নিশ্চই তোমাদের প্রার্থনা কবুল করে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু তারা সালেহ (আঃ) এর কোন কথাই মানলো না। বরংচ একদিন তারা সালেহ (আঃ) কে বললেন, ‘আপনি যদি এই পাহাড়ের পাথর হতে একটি উট বের করে দেখাতে পারেন, তবে আমরা ঈমান আনবো।
হযরত সালেহ (আঃ) তাদের ঈমানের প্রতি ভীষন অনুরাগী ছিলেন। তিনি তাদের এই প্রস্তাবকে বিশেষ একটি সুযোগ মনে করে আল্লাহর কাছে সামুদ জাতির আশা পূরনের জন্য দোয়া করলেন। এবং তাদের ফরমায়েশ মতো পাহাড়ের ভেতর থেকে একটি উট বের করার জন্য প্রার্থনা করলেন।
আল্লাহ হুদ (আঃ) এর দোয়া কবুল করলেন। তখনি পাহাড়ের একটি পাথরে ভীষন কম্পন হলো ও তা ফেটে একটি বিশালাকায় গর্ভবতী উট বের হলো। কিছুদিন পরই উষ্ট্রী (স্ত্রী উট) টি একটি বাচ্চা দিল।

দুষ্ট কাফের লোকেরা শুধু মৌখিক ওয়াদা করেছিল। মূলত: তারা ছিল মোনাফিক। তাই তারা তাদের স্বীকারোক্তি হতে ফিরে গেল। তারা ভেবেছিল সালেহ (আঃ) পাহাড় থেকে উট বের করে আনতে পারবে না। ফলে তাদেরকে ঈমানও আনতে হবে না। সামুদ জাতির শত অন্যায় আল্লাহ তা’য়ালা সহ্য করলেন। তিনি অশেষ ধৈয্য সহকারে তাদেরকে আবারও সুযোগ দিলেন।

উষ্ট্রীটি ছিল অনেক বড়। তাই অনেক বেশী বেশী খেত। মাঠের সমস্ত ঘাস ও কূপের সমস্ত পানি সে একাই খেয়ে ফেলতো। দেশের পশুপাল এই উটটিকে দেখলেই ভয়ে ছুটে পালাতো। তাই দেশবাসী উটটিকে নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত ও অস্থির হয়ে পড়লো। হযরত সালেহ (আঃ) তাদেরকে সতর্ক করে দিলেন যে, এই উটটি তোমাদের জীবন-মৃত্যুর পরীক্ষার বস্তু। কাজেই এর কোন অনিষ্ট করবে না। তাহলে আল্লাহর গযব নেমে আসবে। এবং তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে।

সালেহ (আঃ) তাদেরকে একটি সুপরামর্শ দিলেন যে, আল্লাহর উট একদিন মাঠে চড়ে বেড়াবে, ঘাস খাবে ও কূপের পানি পান করবে। সেদিন তোমাদের
পশুপাল গৃহে আটক থাকবে। আর একদিন তোমাদের পশুপাল মাঠে চড়ে বেড়াবে ও পানি পান করবে। এভাবে আল্লাহর উট ও তোমাদের পশু-পাখি পালাক্রমে একদিন মুক্ত থাকবে ও একদিন আটক থাকবে।

কেউ আল্লাহর কাছ হতে জোর করে বা অতি আবদার করে কিছু চেয়ে নিলে শত কষ্ট হলেও সে ওয়াদা পূরন করতে হয়। সামুদ জাতিও আল্লাহর কাছে হতে উটকে চেয়ে নিয়েছিল। তাই উট সংক্রান্ত সকল ক্লেশ তাদের মেনে নেয়া উচিৎ ছিল।

সালেহ (আঃ) লূত (আঃ) এর জাতির ধ্বংসের কাহিনী বলেও সামুদ জাতিকে সতর্ক করলেন। তাও তারা কোন কথাই গ্রাহ্য করলো না। তারা সালেহ (আঃ) কে বললো, তুমিতো আমাদের মতই সাধারন মানুষ, তোমার উপর কোন ওহী নাযিল হয়নি। নিজেকে বড় প্রমান করার জন্যই এসব করছো। তারা অসৎ পথ অবলম্বন করলো। আল্লাহর রাসুল সালেহ (আঃ) এর কোন কথাই তারা শুনলো না, মানলোও না। একদিন বাচ্চাসহ উটটি জবেহ করে খেয়ে ফেললো। তারপর সালেহ (আঃ) কে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করতে লাগলো।

সামুদ জাতির গর্বিত সর্দার দলটি সালেহ (আঃ) কে বললেন, ‘তুমি যদি সত্যিই আল্লাহর রাসূল হয়ে থাক, তবে আমাদেরকে যে আযাবের ভয় দেখাও, তা নিয়ে আসতো।’ সালেহ (আঃ) বললেন, ‘তোমরা মাত্র তিন দিন নিজ গৃহে ভোগ-বিলাস করে নাও। তারপরই আযাবে পতিত হবে এর ব্যতিক্রম হবে না।’

নিদিষ্ট দিনে আল্লাহর গযব এলো, ভীষন ভূমিকম্প এসে তাদের সব কাফেরদের ধ্বংস করে দিল। তারা পালাবার সুযোগ ও সামর্থ পেল না। সামুদ জাতির অভিশপ্ত লোকেরা নিজ নিজ ঘরে অধ:মুখে মরা অবস্থায় পড়ে রইলো। মূহুর্তে সারা দেশ নীরব-নিস্তব্দ হয়ে গেল। শুধুমাত্র যারা আল্লাহর ভয়-ভীতিতে ছিল ও ঈমান অবলম্বন করেছিল, তারাই রক্ষা পেল।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ‘তবুক অভিযানে যখন সামুদ জাতির হেজর অঞ্চল দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন রসুল (সাঃ) নিজ সঙ্গীদের বিশেষ ভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, ঐ এলাকার নিদিষ্ট একটি কূপ ছাড়া অন্য কূপের পানি যেন কেউ ব্যবহার না করে। ভুলে এক সাহাবী ওখানকার একটি কূপের পানি দিয়ে রুটি বানাবার আটা তৈরী করলে তা সব ফেলে দেয়া হয়েছিল। নবী করীম (সাঃ) বলেছিলেন, সে এলাকার মধ্য দিয়ে যাবার সময় সবাই যেন ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় কেঁদে কেঁদে দ্রুত বেগে এলাকাটি ত্যাগ করে।

এই অঞ্চলটি মদীনা হতে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। বর্তমানে আরবী মানচিত্রে এটি ‘মাদায়েনে সালেহ’ অর্থাৎ সালেহ (আঃ) এর বস্তি সমূহ নামে পরিচিত।
-------------------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র ঃ
আল্ কোরআন: সূরা আ’রাফ, পারা ৮, রুকু ১৭, পারা ১২ রুকু ৬, পারা ১৯ রুকু ১২, ১৯, পারা ২৭ রুকু ১, পারা ২৪ রুকু ১৬, পারা ২৯ রুকু ৯, সূরা শামস, পারা ৩০, সূরা ফাজর।

প্রকাশ ঃ পাক্ষিক ইতিকথা, ১৬-১৮ ফেব্র“য়ারী, ২০০৯।
-----------------------------------------------------------------
By 
Khandaker Nazneen Sultana
Journalist

1 comment:

  1. আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত করুন

    ReplyDelete