Thursday 28 September 2023

দাজ্জালের ডান চোখ কানা হবে, যেন তা ফোলা আঙ্গুরের ন্যায়।


নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাজ্জালের ডান চোখ কানা হবে, যেন তা ফোলা আঙ্গুরের ন্যায়।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) –হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাজ্জাল আসবে। অবশেষে মাদ্বীনাহর এক পার্শ্বে অবতরণ করবে। ( সময় মাদ্বীনাহ) তিনবার কেঁপে উঠবে হবে। তখন সকল কাফির মুনাফিক বের হয়ে তার নিকট চলে আসবে।

আল্লাহর রসূল (সাঃ) সাহাবীরা দুনিয়ার স্বার্থকে ত্যাগ করে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে জিহাদ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু আজ পার্থিব স্বার্থ উদ্ধারই আমাদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ সৃষ্টি করেছে।হায় আফসোস !

হুযাইফাহ ইবনু ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বর্তমান কালের মুনাফিকরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কালের মুনাফিকদের চেয়েও জঘন্য। কেননা, সে কালে তারা (মুনাফিকী) করত গোপনে আর আজ করে প্রকাশ্যে।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃনিকট ভবিষ্যতে ফোরাত নদী তার ভূগর্ভস্থ সোনার খণি বের করে দেবে। সে সময় যারা উপস্থিত থাকবে তারা যেন তা থেকে কিছুই গ্রহণ না করে।[মুসলিম ৫২/, হাঃ ২৮৯৪, আহমাদ ২১৩১৯]

ইবনুউমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন আল্লাহ্ কোন কাওমের উপর আযাব অবতীর্ণ করেন তখন সেখানে বসবাসরত সকলের উপরই সেই আযাব পতিত হয়। অবশ্য পরে প্রত্যেককে তারআমল অনুযায়ী উঠানো হবে। [মুসলিম ৫১/১৯, হাঃ ২৮৭৯, আহমাদ ৪৯৮৫]

যায়নাব বিনতু জাহাশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আমাদের মাঝে সৎ লোক থাকা অবস্থায়ও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব? রাসূল (সাঃ) তার উত্তরে বলেন, হ্যাঁ, যখন নোংরামির মাত্রা বেড়ে যাবে। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, যখন গর্হিত গুনাহের কাজ প্রকাশ পাবে তখন সবার ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়বে। তবে   তাদের প্রত্যেককে তাদের নিজ নিজ আমলের নিয়্যাত অনুযায়ী প্রতিদান দেয়া হবে। আর ক্ষেত্রে সৎ লোকের উপর আযাবের উদ্দেশ্য হবে তাদেরকে পবিত্র করা আর মন্দ লোকের জন্য শাস্তি দেয়া। (ফাতহুল বারী)

হারিসা ইবনু ওয়াহব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা সাদাকা কর। কেননা, শীঘ্রই এমন এক সময় আসবে যে মানুষ সাদাকা নিয়ে ঘোরাফেরা করবে কিন্তু সাদাকা গ্রহণ করে এমন কাউকে পাবে না। মুসাদ্দাদ (রহ.) বলেন, হারিসাউবাইদুল্লাহ্ ইবনুউমার (রাঃ)-এর বৈপিত্রেয় ভাই।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সংঘটিত হবে না যতক্ষণ দুটি বড় দল পরস্পরে মহাযুদ্ধে লিপ্ত না হবে। উভয় দলের দাবি হবে অভিন্ন। আর যতক্ষণ ত্রিশের কাছাকাছি মিথ্যাচারী দাজ্জাল-এর প্রকাশ না পাবে। তারা প্রত্যেকেই নিজেকে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল বলে দাবি করবে এবং যতক্ষণ ইল্ম উঠিয়ে নেয়া না হবে। আর ভূমিকম্প অধিক হারে না হবে। আর যামানা (কাল) সংক্ষিপ্ত না হবে এবং (ব্যাপক হারে) ফিতনা প্রকাশ না পাবে। আর হারজ ব্যপকতা লাভ করবে। হারজ হল হত্যা। আর যতক্ষণ তোমাদের মাঝে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি না পাবে।

তখন সম্পদের এমন সয়লাব শুরু হবে যে, সম্পদের মালিক তার সাদাকা কে গ্রহণ করবে- নিয়েচিন্তাযুক্ত হয়ে পড়বে। এমন কি যার নিকট সে সম্পদ আনা হবে সে বলবে আমার মালের কোনই প্রয়োজন নেই। আর যতক্ষণ মানুষ উঁচু উঁচু প্রাসাদ নির্মাণের জন্য পরস্পরে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ না হবে। আর যতক্ষণ এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বলবে হায়! আমি যদি কবরবাসীর স্থলে হতাম এবং যতক্ষণ সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত না হবে। যখন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠবে এবং সকল লোক তা দেখবে এবং সেদিন সবাই ঈমান আনবে। কিন্তু সে দিন তার ঈমান কাজে আসবে না, যে এর আগে ঈমান আনেনি। কিংবা ইতোপূর্বে যারা ঈমান আনেনি কিংবা ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি- (সূরাহ আনআম /১৫৮)

অবশ্যই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) এমন অবস্থায় কায়িম হবে যে, দুব্যক্তি (পরস্পরে বেচাকেনার উদ্দেশে) কাপড় খুলবে। কিন্তু তারা বেচাকেনা গুটিয়ে রাখা শেষ করতে পারবে না। অবশ্যই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) এমন অবস্থায় কায়িম হবে যে, এক ব্যক্তি তার উটের দুধ দোহন করে নিয়ে ফিরেছে। কিন্তু সে তা পান করতে পারবে না। ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) এমন অবস্থায় কায়িম হবে যে, এক ব্যক্তি তার হাওয আস্তর করছে, কিন্তু সে পানি পান করাতে পারবে না। অবশ্যই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) এমন (অতর্কিত) ভাবে কায়িম হবে যে, এক ব্যক্তি মুখের কাছে লোক্মা তুলবে কিন্তু সে তা আহার করতে পারবে না। [৮৫; মুসলিম /৭২, হাঃ ১৫৭, আহমাদ ৭১৬৪]

সমস্ত হাদীসের মধ্যে দাজ্জালের অস্তিতের সত্যতা সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের জন্য দলীল রয়েছে যে, সে একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি। তার মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাদের পরীক্ষা করবেন। আল্লাহ তাকে অনেক বিষয়ে শক্তি দেবেন। যেমন কাউকে হত্যার পর জীবিত করার, জমিনের উর্বরতা প্রকাশ, নদী প্রবাহিত করা, জান্নাত-জাহান্নাম দেখানো, জমিনের ধন ভান্ডারের তাকে অনুসরণ করা, আসমানকে বৃষ্টি বর্ষণের আদেশ দিলে আসমান পানি বর্ষণ করবে। জমিনকে শস্য উদ্গত করতে বললে জমিন তা উদ্গত করবে। আর এগুলো সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছাতেই হবে। আর তাইতো এরপর যখন তাকে আল্লাহ অক্ষম করে দেবেন, তখন আর ব্যক্তিকে বা অন্য কাউকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না। এরপর তার সব কর্ম বিফল হয়ে যাবে। অবশেষে ঈসা (আঃ) তাকে হত্যা করবেন।  (ফাতহুল বারী)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেনঃ মাসীহ্ দাজ্জালের প্রভাব মাদ্বীনাহ্য় প্রভাব পড়বে না। সেসময় মাদ্বীনাহ্য় সাতটি প্রবেশপথ থাকবে। প্রতিটি প্রবেশপথে দুজন করে ফেরেশ্তা নিযুক্ত থাকবেন।

আবদুল্লাহ্ ইবনুউমার (রাঃ) বলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোক সমাবেশে দাঁড়ালেন এবং মহান আল্লাহর প্রশংসা করলেন। এরপর তিনি দাজ্জাল প্রসঙ্গে বললেনঃ তার সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে সতর্ক করছি। এমন কোন নবী নেই যিনি তাঁর কাওমকে বিষয়ে সতর্ক করেননি। তবে তার সম্পর্কে আমি তোমাদের এমন একটি কথা বলব যা কোন নবীই তাঁর জাতিকে বলেননি। তা হল যে, সে কানা হবে আর আল্লাহ্ অবশ্যই কানা নন।

 ইবনুউমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আমি ঘুমের অবস্থায় দেখতে পেলাম যে, আমি কাবার তাওয়াফ করছি। হঠাৎ একজন লোককে দেখতে পেলাম ধূসর বর্ণের আলুথালু কেশধারী, তার মাথা থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে কিংবা টপকে পড়ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? লোকেরা বলল, ইনি মারিয়ামের পুত্র। এরপর আমি তাকাতে লাগলাম, হঠাৎ দেখতে পেলাম, এক ব্যক্তি স্থুলকায় লাল বর্ণের, কোঁকড়ানো চুল, এক চোখ কানা, চোখটি যেন ফোলা আঙ্গুরের মত। লোকেরা বলল -হল দাজ্জাল!

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতের ভিতরে দাজ্জালের ফিতনা হতে পানাহ চাইতে শুনেছি।

 নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জাল সম্পর্কে বলেছেনঃ তার সঙ্গে পানি আগুন থাকবে। আসলে তার আগুনই হবে শীতল পানি, আর তার পানি হবে আগুন।তার দুই চোখের মাঝখানে কাফির كَافِرٌ শব্দটি লিপিবদ্ধ থাকবে।

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকাছে দাজ্জাল সম্পর্কে দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করলেন। তিনি তার সম্পর্কে আমাদেরকে যা কিছু বলেছিলেন, তাতে এও বলেছেন যে, দাজ্জাল আসবে, তবে মাদ্বীনাহর প্রবেশপথে তার প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ থাকবে। মাদ্বীনাহর নিকটবর্তী বালুময় একটি স্থানে সে অবস্থান নিবে। সময় তার দিকে এক ব্যক্তি আসবে, যে মানুষের মাঝে উত্তম। কিংবা উত্তম ব্যক্তিদের একজন। সে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুই সেই দাজ্জাল, যার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে তাঁর হাদীস বর্ণনা করেছেন। তখন দাজ্জাল বলবে, তোমরা দেখ- আমি যদি একে হত্যা করে আবার জীবিত করে দেই তাহলে কি তোমরা ব্যাপারে সন্দেহ করবে? লোকেরা বলবে, না। এরপর সে তাকে হত্যা করবে এবং আবার জীবিত করবে। তখন সে লোকটি বলবে, আল্লাহর কসম! তোর সম্পর্কে আজকের মত দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলাম না। তখন দাজ্জাল তাকে হত্যা করতে চাইবে। কিন্তু সে তা করতে পারবে না।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাদ্বীনার প্রবেশপথগুলোতে ফেরেশতা নিযুক্ত আছেন। কাজেই সেখানে প্লেগ দাজ্জাল প্রবেশ করবে না।

ইবরাহীম (:) যেমন মক্কার জন্য দু করেছিলেন , রসূল (সাঃ) মদীনাবাসীদের জন্য বরকতের দু করেন।  নাবী (সাঃ) বলেন,মদীনাহ ঈমানের অবস্থানস্থল ঠিকানা। দ্বীন এখান থেকেই প্রসারিত হয়েছিল আবার এখানে ফিরে আসবে।(বুখারী মুসলিম)

যাইনাব বিন্ জাহাশ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, একদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্বিগ্ন অবস্থায় এরূপ বলতে বলতে আমার গৃহে প্রবেশ করলেন যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন উপাস্য নাই। আক্ষেপ আরবের জন্য মন্দ থেকে যা যতি নিকটবর্তী। বৃদ্ধাঙ্গুল তৎসংলগ্ন আঙ্গুল গোলাকৃতি করে তার দিকে ইশারা করে বললেনঃ আজ ইয়াজূজ মাজূজের দেয়াল পরিমাণ খুলে গেছে। যাইনাব বিন্ত জাহাশ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মাঝে সৎ লোকেরা উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব? উত্তরে তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, যদি পাপকাজ বৃদ্ধি পায়।

খন্দকার নাজনীন সুলতানা ,লেখক, সাংবাদিক।


No comments:

Post a Comment