Wednesday 27 September 2023

দুনিয়ার মধ্যে বহু বস্ত্র পরিহিতা পরকালে উলঙ্গ থাকবে।


 আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ সতর্ক থাক সেই ফিতনা হতে যা বিশেষভাবে তোমাদের যালিম


লোকেদের মাঝেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকবে না- (সূরাহ আনফাল /২৫)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃসে সময় তোমরা ধৈর্য ধরবে, যতক্ষণ না আমার সাথে মিলিত হও।

প্রতিটি যুগের চেয়ে তার পরের যুগ আরও খারাপ হবে।তিনি আরও বললেনঃ দুনিয়ার মধ্যে বহু বস্ত্র পরিহিতা পরকালে উলঙ্গ থাকবে।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সময় নিকটতর হতেথাকবে, আরআমল কমে যেতে থাকবে, কৃপণতা ছড়িয়ে দেয়া হবে, ফিতনার বিকাশ ঘটবে এবং হারজ ব্যাপকতর হবে। সহাব--কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, হারজ সেটা কী? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হত্যা, হত্যা।'


নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার পরে একে অন্যের গর্দান উড়িয়ে কুফরীর দিকেফিরে যেয়ো না। তোমাদের (একের) রক্ত, সম্পদ, ইযযত চামড়া অপরের জন্য হারাম।

সমুদ্রের ঢেউয়ের মত ফিতনার ঢেউ হইবে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বলেছেন,  কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে এবংতাকে জাহান্নামে ফেলা হবে। এরপর তাকে গাধা দিয়ে চাকা ঘুরিয়ে যেমন গম পিষা হয়, তেমনি পিষে ফেলা হবে। জাহান্নামবাসীরা তার পাশে এসে জড় হবে এবং বলবে, হে অমুক! তুমিই কি আমাদের ভাল কাজের হুকুম মন্দ কাজের থেকে নিষেধ করতে না? তখন সে বলবে, হ্যাঁ, আমি ভালকাজের হুকুম দিতাম, তবে আমি নিজে তা করতাম না এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতাম, তবে আমি নিজেই তা করতাম।'



আসমা
(রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমিআমারহাউযের কাছে আগমনকারী লোকদের অপেক্ষায় থাকব। তখন আমার সামনে থেকে কতক লোককে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি বলব, এরা তো আমার উম্মাত। তখন বলা হবে, আপনি জানেন না, এরা (আপনার পথ থেকে) পিছনে চলে গিয়েছিল।

 ইবনু আবূ মুলাইকাহ বলেনঃ হে আল্লাহ্! পিছনে ফিরে যাওয়া কিংবা ফিতনায় পড়া থেকে আমরা আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি।

নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বাণীঃ আমার পরে তোমরা এমন কিছু দেখতে পাবে, যা তোমরা পছন্দ করবে না।

ইবনুউমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, আমার পরে তোমরা পরস্পরে হানাহানি করে কুফরীর দিকে ফিরে যেও না।

আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ধৈর্য ধারণ কর যতক্ষণ না হাউযের ধারে আমার সঙ্গে মিলিত হও।

আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরবলেছেন: আমার পরে তোমরা অবশ্যই ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করবে। এবং এমন কিছু বিষয় দেখতে পাবে, যা তোমরা পছন্দ করবে না। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তাহলে আমাদের জন্য কী হুকুম করছেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ তাদের হক পূর্ণরূপে আদায় করবে, আর তোমাদের হক আল্লাহর কাছে চাইবে।

উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদ্বীনাহর টিলাসমূহের একটির উপর উঠে বললেনঃ আমি যা দেখি তোমরা কি তা দেখতে পাও? উত্তরে সাহাবা--কিরাম বললেন, না। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অবশ্যই আমি দেখতে পাচ্ছি, তোমাদের ঘরগুলোর ফাঁকে ফাঁকে ফিতনা বৃষ্টির মতো পতিত হচ্ছে।

শাকিক (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমিআবদুল্লাহ্ আবূ মূসা (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তাঁরা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই কিয়ামতের আগে এমন একটি সময় আসবে যখন সব জায়গায় মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে এবং ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে। সে সময়হারজ্ বর্দ্ধিত হবে। আরহারজ্ হল (মানুষ) হত্যা।

 আবূ আওয়ানা তাঁর বর্ণনাসূত্রে আবূ মূসা আশ্আরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে, তিনিআবদুল্লাহ্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে যুগকেহারজ-এর যুগ বলেছেন সে যুগ সম্পর্কে আপনি কিছু জানেন কি?

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) যাদের জীবনকালে সংঘটিত হবে তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক। [মুসলিম ৫২/২৬, হাঃ ২৯৪৯]

কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার প্রাক্কালে আল্লাহ তাআলা হালকা বাতাস প্রেরণ করবেন এবং যাদের অন্তরে বিন্দু পরিমাণ ঈমান থাকবে বাতাস তাদের মৃত্যু ঘটাবে। ফলে কোন মুমিন মুসলিম আর অবশিষ্ট থাকবে না। অবশিষ্ট থাকবে শুধু মন্দ খারাপ লোক তথা কাফের মুশরিক। আর তখনই সংঘটিত হবে মহাপ্রলয়-কিয়ামত।

নবী সহধর্মিণী উম্মু সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীত অবস্থায় ঘুম থেকে জেগে বলতে লাগলেন, সুবহানাল্লাহ্, আল্লাহ্ তাআলা কতই না খাযানা অবতীর্ণ করেছেন আর কতই না ফিতনা অবতীর্ণ হয়েছে। কে আছে যে হুজরাবাসিনীদেরকে জাগিয়ে দেবে, যেন তারা সালাত আদায় করে। বলে তিনি তাঁর স্ত্রীদেরকে উদ্দেশ্য করেছিলেন। তিনি আরও বললেনঃ দুনিয়ার মধ্যে বহু বস্ত্র পরিহিতা পরকালে উলঙ্গ থাকবে।

আবদুল্লাহ্ ইবনুউমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে লোক আমাদের উপর অস্ত্র তুলবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। [৬৮৭৪; মুসলিম /৪২, হাঃ ৯৮]

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেনতার অন্য কোন ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র উঠিয়ে ইশারা না করে। কারণ সে জানে না হয়ত শয়তান তার হাতে ধাক্কা দিয়ে বসবে, ফলে (এক মুসলিমকে হত্যার কারণে) সে জাহান্নামের গর্তে পতিত হবে। [মুসলিম ৪৫/৩৫, হাঃ ২৬১৭]

আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি তীর সাথে নিয়ে আমাদের মসজিদে কিংবা বাজারে যায়, তাহলে সে যেন তীরের ফলাগুলো ধরে রাখে, কিংবা তিনি বলেছিলেনঃ তাহলে সে যেন তা মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে, যাতে সে তীর কোন মুসলিমের গায়ে না লাগে। [৪৫২; মুসলিম ৪৫/৩৪, হাঃ ২৬১৫, আহমাদ ১৯৫৯৩]

আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কোন মুসলিমকে গাল দেয়া ফাসিকী কাজ (জঘন্য পাপ) আর কোন মুসলিমকে হত্যা করা কুফরী।

 

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শীঘ্রইফিতনা দেখা দেবে। তখন উপবিষ্ট ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চেয়ে ভাল (ফিতনামুক্ত) থাকবে, দাঁড়ানো ব্যক্তি চলমান ব্যক্তির চেয়ে ভাল থাকবে, চলমান ব্যক্তি ধাবমান ব্যক্তির চেয়ে ভাল থাকবে। যে ব্যক্তি সে ফিতনার দিকে তাকাবে, ফিতনা তাকে ঘিরে ধরবে। কাজেই তখন কেউ যদি কোথাও কোন নিরাপদ আশ্রয়স্থল কিংবা আত্মরক্ষার ঠিকানা পায়, তাহলে সে যেন সেখানে আশ্রয় নেয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি দুজন মুসলিম তলোয়ার নিয়ে পরস্পর সংঘর্ষের জন্য মুখোমুখী হয়, তাহলে উভয়েই জাহান্নামীদের মধ্যে গণ্য হবে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, হত্যাকারী তো জাহান্নামী। কিন্তু নিহত ব্যক্তির কী অপরাধ? তিনি বললেন, সেও তার বিপক্ষকে হত্যা করার সংকল্প করেছিল।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ এক সময় ঘুমাবে। তার অন্তর থেকে আমানাত উঠিয়ে নেয়া হবে। তখন একটি বিন্দুর মত চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। এরপর সে আবার ঘুমাবে। তারপর আবার তুলে নেয়া হবে, তখন ফোসকার মত তার চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। যেমন একটা জ্বলন্ত অঙ্গারকে যদি তুমি পায়ের উপর রেখে দাও এতে পায়ে ফোস্কা পড়ে, তখন তুমি সেটাকে ফোলা দেখবে। অথচ তার মধ্যে কিছুই নেই। ( সময়) মানুষ বেচাকেনা করবে বটে কিন্তু কেউ আমানাত আদায় করবে না।

 

তখন বলা হবে, অমুক গোত্রে একজন আমানাতদার ব্যক্তি আছেন। কোন কোন লোক সম্পর্কে বলা হবে যে, লোকটি কতই না বুদ্ধিমান, কতই না বিচক্ষণ, কতই না বীর, অথচ তার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান নেই।

 


রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃজাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী এক সম্প্রদায় হবে।যে ব্যক্তি তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে, তাকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়বে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের কিছু স্বভাবের কথা আমাদের বর্ণনা করুন। তিনি বললেনঃ তারা আমাদের লোকই এবং আমাদের ভাষায়ই কথা বলবে। আমি বললাম, যদি এমন অবস্থা আমাকে পেয়ে বসে, তাহলে কী করতে হুকুম দেন? তিনি বললেনঃ মুসলিমদের জামাআত ইমামকে আঁকড়ে থাকবে। আমি বললাম, যদি তখন মুসলিমদের কোন (সংঘবদ্ধ) জামাআত ইমাম না থাকে? তিনি বললেনঃ তখন সকল দলমত ত্যাগ করে সম্ভব হলে কোন গাছের শিকড় কামড়িয়ে পড়ে থাকবে, যতক্ষণ না সে অবস্থায় তোমার মৃত্যু উপস্থিত হয়।

’’হে ঈমানদারগণ! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যা তোমাদের কাছে প্রকাশ করা হলে তা তোমাদেরকে কষ্ট দিবে ’’- (সূরাহ আল-মায়িদাহ /১০১)

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শীঘ্রই এমন এক সময় আসবে যখন মুসলিমদের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সম্পদ হবে ছাগল। ফিতনা থেকে দ্বীন রক্ষার্থে পলায়নের জন্য তারা এগুলো নিয়ে পর্বতের চূড়ায় এবং বৃষ্টিপাতের জায়গাগুলোতে আশ্রয় নেবে।

তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না ফিতনার অবসান ঘটে- (সূরাহ আল-বাক্বারাহ /১৯৩)

হুযাইফাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত , নবী সাঃ বলেছেন, 'মানুষ নিজের পরিবার, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি প্রতিবেশীর ব্যাপারে যে ফিতনায় পতিত হয় সালাত, সাদাকা, সৎকাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ তার সে পাপকে মুছে ফেলে।'

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যখন খবর পৌঁছল যে, পারস্যের লোকেরা কিসরার মেয়েকে তাদের শাসক নিযুক্ত করেছে, তখন তিনি বললেনঃ সে জাতি কক্ষনো সফলকাম হবে না, যারা তাদের শাসনভার কোন স্ত্রীলোকের হাতে অর্পণ করে।'

ইবনুউমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন আল্লাহ্ কোন কাওমের উপর আযাব অবতীর্ণ করেন তখন সেখানে বসবাসরত সকলের উপরই সেই আযাব পতিত হয়। অবশ্য পরে প্রত্যেককে তারআমল অনুযায়ী উঠানো হবে। [মুসলিম ৫১/১৯, হাঃ ২৮৭৯, আহমাদ ৪৯৮৫]

যায়নাব বিনতু জাহাশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আমাদের মাঝে সৎ লোক থাকা অবস্থায়ও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব? রাসূল (সাঃ) তার উত্তরে বলেন, হ্যাঁ, যখন নোংরামির মাত্রা বেড়ে যাবে।'

 খন্দকার নাজনীন সুলতানা ,

লেখক, সাংবাদিক। 

 

 

 

No comments:

Post a Comment