আবূ কাতাদাহ্ আনসারী (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি সালাতে দাঁড়িয়ে তা দীর্ঘায়িত করব বলে ইচ্ছা করি, অতঃপর শিশুর কান্না শুনতে পেয়ে আমি সালাত সংক্ষিপ্ত করি এ আশংকায় যে, তার মা কষ্ট পাবে।
সাহল ইবনু
সা‘দ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবীগণ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সালাত আদায় করতেন। কিন্তু ইযার বা লুঙ্গী
ছোট হবার কারণে তা গলার সাথে বেঁধে নিতেন। আর নারীদেরকে বলে দেয়া হয়েছিল, তোমরা সিজদা্
হতে মাথা উঠাবে না যে পর্যন্ত পুরুষগণ ঠিকমত না বসবে।
ইবনু ‘আব্বাস
(রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি অঙ্গের
সাহায্যে সিজদা্ করতে এবং সালাতের মধ্যে চুল একত্র না করতে এবং কাপড় টেনে না ধরতে নির্দেশ
প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
আনাস ইবনু
মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিজদায় (অঙ্গ
প্রত্যঙ্গের) সামঞ্জস্য রক্ষা কর এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যেন দু’ হাত বিছিয়ে না দেয়, যেমন কুকুর বিছিয়ে
দেয়।
‘আয়িশাহ্
(রাযি.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সালাতে দাজ্জালের
ফিতনা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।
আবূ বকর সিদ্দীক
(রাযি.) হতে বর্ণিত। একদা তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট
আরয করলেন, আমাকে সালাতে পাঠ করার জন্য একটি দু‘আ শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, এ দু‘আটি বলবে-
اللَّهُمَّ إِنِّي
ظَلَمْتُ نَفْسِي
ظُلْمًا كَثِيرًا
وَلاَ يَغْفِرُ
الذُّنُوبَ إِلاَّ
أَنْتَ فَاغْفِرْ
لِي مَغْفِرَةً
مِنْ عِنْدِكَ
وَارْحَمْنِي إِنَّك
أَنْتَ الْغَفُورُ
الرَّحِيمُ
‘‘হে
আল্লাহ্! আমি নিজের উপর অধিক জুলুম করেছি। আপনি ছাড়া সে অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেই।
আপনার পক্ষ হতে আমাকে তা ক্ষমা করে দিন এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি
ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’’
আবূ হুরাইরাহ্
(রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, দরিদ্রলোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
নিকট এসে বললেন, সম্পদশালী ও ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদের দ্বারা উচ্চমর্যাদা ও স্থায়ী
আবাস লাভ করছেন, তাঁরা আমাদের মত সালাত আদায় করছেন, আমাদের মত সিয়াম পালন করছেন এবং
অর্থের দ্বারা হাজ্জ, ’উমরাহ, জিহাদ ও সদাক্বাহ করার মর্যাদাও লাভ করছেন। এ শুনে তিনি
বললেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু কাজের কথা বলব, যা তোমরা করলে, যারা নেক কাজে তোমাদের
চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গেছে, তাদের পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে। তবে যারা পুনরায় এ ধরনের কাজ
করবে তাদের কথা স্বতন্ত্র। তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর তেত্রিশ বার করে তাসবীহ্ (সুবহানাল্লাহ্),
তাহমীদ (আলহামদু ল্লিল্লাহ্) এবং তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করবে। (এ নিয়ে) আমাদের
মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হলো। কেউ বলল, আমরা তেত্রিশ বার তাসবীহ্ পড়ব। তেত্রিশ বার তাহমীদ
আর চৌত্রিশ বার তাকবীর পড়ব। অতঃপর আমি তাঁর নিকট ফিরে গেলাম। তিনি বললেন, سُبْحَانَ اللهِ
وَالْحَمْدُ لِلَّهِ
وَاللهُ أَكْبَرُ
বলবে, যাতে সবগুলোই তেত্রিশবার করে হয়ে যায়। (৬৩২৯; মুসলিম ৫/২৬, হাঃ ৫৯৫)
নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর বলতেনঃ
لاَ إِلَهَ
إِلاَّ اللَّهُ
وَحْدَهُ لاَ
شَرِيكَ لَهُ،
لَهُ الْمُلْكُ،
وَلَهُ الْحَمْدُ،
وَهْوَ عَلَى
كُلِّ شَىْءٍ
قَدِيرٌ، اللَّهُمَّ
لاَ مَانِعَ
لِمَا أَعْطَيْتَ،
وَلاَ مُعْطِيَ
لِمَا مَنَعْتَ،
وَلاَ يَنْفَعُ
ذَا الْجَدِّ
مِنْكَ الْجَدُّ
’’এক
আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই
জন্য, তিনি সব কিছুর উপরই ক্ষমতাশীল। হে আল্লাহ্! আপনি যা প্রদান করতে চান তা রোধ করার
কেউ নেই, আর আপনি যা রোধ করেন তা প্রদান করার কেউ নেই। আপনার নিকট (সৎকাজ ভিন্ন) কোন
সম্পদশালীর সম্পদ উপকারে আসে না।’’
ইসলাম ধর্মের
পণ্ডিতগণের মধ্যে থেকে কতকগুলি পণ্ডিত বলেছেন যে, ফরজ নামাজের সালাম ফিরানোর পর ইমামের
জন্য মুসাল্লিগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসা ইসলামের শিক্ষা সম্মত একটি উত্তম কাজ। তাই সালাম
ফিরানোর পর মুসাল্লিগণকে পিছনে রেখে মেহরাবে ইমামের জন্য বসে থাকার বিষয়টি ইসলামের
শিক্ষা সম্মত কাজ নয় বরং তা ঘৃণিত ও অপছন্দনীয় কাজ। তাই সালাম ফিরানোর পর ইমামের জন্য
মুসাল্লিগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসাই হলো ইসলামের শিক্ষা সম্মত একটি উত্তম কাজ।যাতে মুসাল্লিগণ
তাদের প্রয়োজন মোতাবেক ইসলাম ধর্মের বিষয়ে অথবা জাগতিক বিষয়ে ইমামকে সহজে কোনো প্রশ্ন
করতে পারে।
যায়দ ইবনু
খালিদ জুহানী (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম রাতে বৃষ্টি হবার পর হুদায়বিয়াতে আমাদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। সালাত
শেষ করে তিনি লোকদের দিকে ফিরে বললেনঃ তোমরা কি জান, তোমাদের পরাক্রমশালী ও মহিমাময়
প্রতিপালক কি বলেছেন? তাঁরা বললেনঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই বেশি জানেন। আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (রব) বলেন, আমার বান্দাদের মধ্য কেউ আমার প্রতি
মু’মিন হয়ে গেল এবং কেউ কাফির। যে বলেছে,
আল্লাহর করুণা ও রহমতে আমরা বৃষ্টি লাভ করেছি, সে হল আমার প্রতি বিশ্বাসী এবং নক্ষত্রের
প্রতি অবিশ্বাসী। আর যে বলেছে, অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টিপাত হয়েছে,
সে আমার প্রতি অবিশ্বাসী হয়েছে এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাসী হয়েছে। (১০৩৮, ৪১৪৭, ৭৫০৩;
মুসলিম ১/৩২ হাঃ ৭১, আহমাদ ১৭০৬০)
আনাস ইবনু
মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
অর্ধরাত পর্যন্ত সালাত বিলম্ব করলেন। এরপর তিনি আমাদের সামনে বের হয়ে এলেন। সালাত শেষে
তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, লোকেরা সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু তোমরা
যতক্ষণ পর্যন্ত সালাতের অপেক্ষায় থাকবে ততক্ষণ তোমরা যেন সালাতে রত থাকবে।
উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালামফিরানোর পর নিজ জায়গায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা
করতেন। ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বসে
থাকার কারণ আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞাত। তবে আমার মনে হয় সালাতের পর মহিলাগণ যাতে ফিরে যাওয়ার
সুযোগ পান।
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যদি এ জাতীয় গাছ হতে খায়, তিনি এ দ্বারা রসুন বুঝিয়েছেন, সে যেন আমাদের মসজিদে না আসে। (রাবী আতা (রহ.) বলেন) আমি জাবির (রাযি.) কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দ্বারা কী বুঝিয়েছেন (জাবির (রাযি.) বলেন, আমার ধারণা যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দ্বারা কাঁচা রসুন বুঝিয়েছেন এবং মাখ্লাদ ইবনু ইয়াযীদ (রহ.) ইবনু জুরাইজ (রহ.) হতে দুর্গন্ধযুক্ত হবার কথা উল্লেখ করেছেন। (৮৫৫, ৫৪৫২, ৭৩৫৯; মুসলিম ৫/১৭, হাঃ ৫৬৪, আহমাদ ১৫২৯৯)
মাসজিদে প্রবেশ করার পূর্বে যে ব্যক্তি কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচা রসুন, ইত্যাদি দুর্গন্ধ জাতীয় কিছু খাবে, সেব্যক্তির জন্য মাসজিদে প্রবেশ করা কঠোরতার সহিত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাতে সে তার দুর্গন্ধের দ্বারা অন্য মুসল্লিদেরকে কষ্ট না দেয়। কেননা যে ব্যক্তি নিজের দুর্গন্ধের দ্বারা মুসল্লিদেরকে কষ্ট দেয়, সে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে ফেরেশতাগণকেই কষ্ট দিয়ে থাকে।
যে ব্যক্তির শরীরের মধ্যে ধুমপান অথবা বিড়ি, সিগারেট, তামাক ইত্যাদির দুর্গন্ধ থাকবে অথবা তার শরীরের পোশাক, জামাকাপড়, কিংবা পায়ের মোজা দুর্গন্ধযুক্ত হবে, সে ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করবে না। তাই মুসল্লি ব্যক্তি যেন মাসজিদে প্রবেশ করার পূর্বে নিজের শরীর, শরীরের পোশাক, জামাকাপড় ইত্যাদি ভালোভাবে দেখে নেয় বা পরিদর্শন নেয়। যাতে সে মাসজিদে প্রবেশ করে মুসল্লিদেরকে এবং ফেরেশতাগণকে কষ্ট না দেয়।
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,জুমু‘আহর দিন প্রত্যেক বয়ঃপ্রাপ্ত (মুসলিমের) গোসল করা ওয়াজিব। (৮৭৯, ৮৮০, ৮৯৫, ২৬৬৫ মুসলিম ৭/১, হাঃ ৮৪৬, আহমাদ ১১২৫০)
‘আবদুল্লাহ্
(রাযি.) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের কারো স্ত্রী যদি (সালাতের জন্য মসজিদে যাবার) অনুমতি চায় তাহলে তার স্বামী তাকে যেন বাধা না দেয়।
লেখক , সাংবাদিক।
No comments:
Post a Comment