মানুষের মধ্যে সেই মু’মিন মুজাহিদই উত্তম, যে নিজের জান দিয়ে ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে।
আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ ’’যে ব্যক্তি নিজ ঘর থেকে বের হবে
আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করার জন্য, তারপর সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তার
প্রতিদান অবধারিত হয়ে আছে আল্লাহর কাছে।’’
(আন-নিসা ১০০)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশের পর আর কেউ দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা করবে না, যদিও দুনিয়ার সকল জিনিস তাকে দেয়া হয়। একমাত্র শহীদ ব্যতীত; সে দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা করবে যেন দশবার শহীদ হয়। কেননা সে শাহাদাতের মর্যাদা দেখেছে। (২৭৯৫) (মুসলিম ৩৩/২৯ হাঃ ১৮৭৭, আহমাদ ১২২৭৫)
যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তোমরা কখনও তাদের মৃত ধারণা কর
না। বরং তারা তাদের রবের কাছে জীবিত এবং জীবিকাপ্রাপ্ত। তারা পরিতুষ্ট তাতে যা আল্লাহ
তাদের দান করেছেন নিজ অনুগ্রহে এবং তারা আনন্দ প্রকাশ করছে তাদের ব্যাপারে যারা এখনও
তাদের সাথে মিলিত হয়নি, তাদের পেছনে রয়ে গেছে। কারণ তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও
হবে না। তারা আনন্দ প্রকাশ করে আল্লাহর তরফ থেকে নিয়ামাত ও অনুগ্রহ লাভের জন্য। আর
আল্লাহ তো মু’মিনদের শ্রমফল বিনষ্ট
করেন না। (আলে ‘ইমরান ১৬৯-১৭১)
আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ ’’ওহে যারা ঈমান এনেছ? আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের কথা বলে দিব, যা তোমাদেরকে রক্ষা করবে এক যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে? তা এই যে, তোমরা ঈমান আনবে আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি এবং জিহাদ করবে আল্লাহর পথে তোমাদের ধন-সম্পদ ও তোমাদের জীবন দিয়ে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে। আল্লাহ্ ক্ষমা করে দিবেন তোমাদের গুনাহসমূহ এবং দাখিল করবেন জান্নাতে, প্রবাহিত হতে থাকবে যার নিম্নদেশে নহরসমূহ এবং এমন মনোরম গৃহ যা রয়েছে অনন্তকাল বাসের জন্য। এটাই মহা সাফল্য।’’ (আস্ সফ ১০-১২)
. আবূ সা’ঈদ
খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জিজ্ঞেস করা হলো, ’হে আল্লাহর রাসূল! মানুষের মধ্যে
কে উত্তম?’ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ’সেই মু’মিন যে নিজ জান ও মাল দিয়ে
আল্লাহর পথে জিহাদ করে।’
সাহাবীগণ বললেন, ’অতঃপর কে?’ তিনি বললেন, ’সেই মু’মিন
আল্লাহর ভয়ে যে পাহাড়ের কোন গুহায় অবস্থান নেয় এবং স্বীয় অনিষ্ট থেকে লোকদেরকে নিরাপদ
রাখে।’ (মুসলিম ৩৩/৩৪ হাঃ ১৮৮৮, আহমাদ ১১৮৩৮)
আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ নিশ্চয় আল্লাহ খরিদ করে নিয়েছেন মু’মিনদের থেকে তাদের জান ও
তাদের মাল এর বিনিময়ে যে, অবশ্যই তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর
পথে, কখনও হত্যা করে এবং কখনও নিহত হয়। তাওরাত, ইঞ্জীল ও কুরআনে এ সম্পর্কে সত্য ওয়াদা
রয়েছে। আল্লাহর চাইতে নিজের ওয়াদা অধিক পালনকারী আর কে আছে? সুতরাং তোমরা আনন্দ কর
তোমাদের সে সাওদার জন্য যা তোমরা তাঁর সাথে করেছ। আর তা হল বিরাট সাফল্য। তারা তাওবাকারী,
‘ইবাদাতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, রোযাদার, রুকূ‘কারী,
সিজদাকারী, ভাল কাজের আদেশদাতা, মন্দ কাজে বাধা প্রদানকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা
হিফাযাতকারী; (এসব গুণে গুণান্বিত) মুমিনদেরকে আপনি খোশখবর শুনিয়ে দিন। (আত তওবা্ ১১১-১২)
‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর
রাসূল! কোন্ কাজ সর্বোত্তম?’ তিনি বললেন, ‘সময় মত সালাত আদায় করা।’ আমি বললাম, ‘অতঃপর কোনটি?’
তিনি বলেন, ‘অতঃপর পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করা।’
আমি বললাম, ‘অতঃপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ।’
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘(মক্কা) বিজয়ের পর আর হিজরত নেই। বরং রয়েছে কেবল জিহাদ ও নিয়্যাত। যখন তোমাদের জিহাদের ডাক দেয়া হয়, তখন বেরিয়ে পড়।’
‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি, তবে কি
আমরা জিহাদ করব না?’ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘তোমাদের
জন্য উত্তম জিহাদ হচ্ছে মকবুল হজ্জ।’
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর পথের মুজাহিদ, অবশ্য
আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞাত কে তাঁর পথে জিহাদ করছে, সর্বদা সিয়াম পালনকারী ও সালাত আদায়কারীর
মত। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর পথে জিহাদকারীর
জন্য এই দায়িত্ব নিয়েছেন, যদি তাকে মৃত্যু দেন তবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা
পুরস্কার বা গানীমতসহ নিরাপদে ফিরিয়ে আনবেন।
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
’আমার উম্মাতের কিছু ব্যক্তিকে আল্লাহর পথে জিহাদরত অবস্থায় আমার সামনে পেশ করা হয়।
তারা এ সমুদ্রের মাঝে এমনভাবে আরোহী যেমন বাদশাহ তখতের উপর, অথবা বলেছেন, বাদশাহর মত
তখতে উপবিষ্ট।’
তিনি আরো বলেন, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাতে একশ’টি মর্যাদার স্তর প্রস্তুত রেখেছেন। দু’টি স্তরের ব্যবধান আসমান ও যমীনের দূরত্বের মত। তোমরা আল্লাহর নিকট চাইলে ফেরদাউস চাইবে। কেননা এটাই হলো সবচেয়ে উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত।
আল্লাহর পথের মুজাহিদদের মর্যাদা প্রসঙ্গে সামুরাহ (রাঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমি আজ রাতে
(স্বপ্নে) দেখতে পেলাম যে, দু’ব্যক্তি
আমার নিকট এল এবং আমাকে নিয়ে একটি গাছে উঠলো। অতঃপর আমাকে এমন উৎকৃষ্ট একটি ঘরে প্রবেশ
করিয়ে দিল এর আগে আমি কখনো এর চেয়ে সুন্দর ঘর দেখিনি। সে দু’ব্যক্তি আমাকে বলল, এই ঘরটি
হচ্ছে শহীদদের ঘর।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া
ও তাতে যা কিছু আছে, তার চেয়ে উত্তম। (২৭৯৬, ৬৫৬৮) (মুসলিম ৩৩/৩০ হাঃ ১৮৮০, আহমাদ ১২৩৫২)
সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহর রাস্তায় একটিসকাল কিংবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তার ভিতরের সকল কিছু থেকে উত্তম। (২৮৯২, ৩২৫০, ৬৪১৫) (মুসলিম ৩৩/৩০ হাঃ ১৮৮১, আহমাদ ১৫৫৬০)
উম্মু হারাম বিনতু মিলহান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার নিকটবর্তী এক স্থানে শুয়েছিলেন, অতঃপর জেগে উঠে মুচকি হাসতে লাগলেন। আমি বললাম আপনি হাসলেন কেন? তিনি বললেন, আমার উম্মাতের এমন কিছু লোককে আমার সামনে উপস্থিত করা হলো যারা এই নীল সমুদ্রে আরোহণ করছে, যেমন বাদশাহ সিংহাসনে আরোহণ করে। উম্মু হারাম (রাঃ) বললেন, আল্লাহর নিকট দুআ করুন, তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি তার জন্য দুআ করলেন। অতঃপর তিনি দ্বিতীয়বার নিদ্রা গেলেন এবং আগের মতই করলেন। উম্মু হারাম (রাঃ) আগের মতই বললেন এবং আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আগের মতই জবাব দিলেন। উম্মু হারাম (রাঃ) বললেন, আল্লাহর নিকট দুআ করুন তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মু’আবিয়াহ (রাঃ)-এর সঙ্গে মুসলিমরা যখন প্রথম সমুদ্র পথে অভিযানে বের হয়, তখন তিনি তাঁর স্বামী ’উবাদাহ ইবনু সামিতের সঙ্গে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে তাদের কাফেলা সিরিয়ায় যাত্রা বিরতি করে। আরোহণের জন্য উম্মু হারামকে একটি সওয়ারী দেয়া হলো, তিনি সওয়ারীর উপর থেকে পড়ে মারা গেলেন।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, কোন ব্যক্তি আল্লাহর
পথে আহত হলে এবং আল্লাহ্ই ভাল জানেন কে তাঁর পথে আহত হবে কিয়ামতের দিন সে তাজা রক্ত
বর্ণে রঞ্জিত হয়ে আসবে এবং তা থেকে মিশ্কের সুগন্ধি ছড়াবে।
আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ ‘‘বলুন, তোমরা তো আমাদের জন্য প্রতীক্ষা
করছ দু’টি মঙ্গলের মধ্যে একটির।’’ (আত্-তাওবাহ ৫২)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার চাচা
আনাস ইবনু নাযার (রাঃ) বাদারের যুদ্ধের সময় অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর
রাসূল! মুশরিকদের সঙ্গে আপনি প্রথম যে যুদ্ধ করেছেন, আমি সে সময় অনুপস্থিত ছিলাম। আল্লাহ্
যদি আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধে শরীক হবার সুযোগ দেন, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ্
দেখতে পাবেন যে, আমি কী করি।’
অতঃপর উহুদের যুদ্ধে মুসলিমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে আনাস ইবনু নাযার (রাঃ) বলেছিলেন, আল্লাহ্!
এরা অর্থাৎ তাঁর সাহাবীরা যা করেছেন, তার সম্বন্ধে আপনার নিকট ওযর পেশ করছি এবং এরা
অর্থাৎ মুশরিকরা যা করেছে তা থেকে আমি নিজেকে সম্পর্কহীন বলে ঘোষণা করছি। অতঃপর তিনি
এগিয়ে গেলেন, এবং সা‘দ
ইবনু মু‘আযের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ
হলো। তিনি বললেন, হে সা‘দ
ইবনু মু‘আয, (আমার কাম্য)। নাযারের
রবের কসম, উহুদের দিক থেকে আমি জান্নাতের সুগন্ধ পাচ্ছি। সা‘দ (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর
রাসূল! তিনি যা করেছেন, আমি তা করতে পারিনি। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা তাকে এমতাবস্থায়
পেয়েছি যে, তার দেহে আশিটিরও অধিক তলোয়ার, বর্শা ও তীরের যখম রয়েছে। আমরা তাকে নিহত
অবস্থায় পেলাম। মুশরিকরা তার দেহ বিকৃত করে দিয়েছিল। তার বোন ব্যতীত কেউ তাকে চিনতে
পারেনি এবং বোন তার আঙ্গুলের ডগা দেখে চিনতে পেরেছিল। আনাস (রাঃ) বলেন, আমাদের ধারণা,
কুরআনের এই আয়াতটি তাঁর এবং তাঁর মত মুমিনদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। ‘‘মু’মিনদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক
আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে।’’
(আল-আহযাবঃ ২৩)
আবুদ দারদা (রাঃ) বলেন, ‘আমল অনুসারে তোমরা জিহাদ করে থাকো। আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা যা কর না, তা তোমরা কেন বল? তোমরা যা করনা তোমাদের তা বলা আল্লাহর নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক। যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে সারিবদ্ধভাবে সীসা গলানো সুদৃঢ় প্রাচীরের মত, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। (আস্ সফ ২-৩)
বারা’
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লৌহ বর্মে আবৃত এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি যুদ্ধে শরীক হবো, না ইসলাম
গ্রহণ করব?’ তিনি বললেন, ‘ইসলাম গ্রহণ কর, অতঃপর যুদ্ধে যাও।’ অতঃপর সে ব্যক্তি ইসলাম
গ্রহণ করে যুদ্ধে গেল এবং শাহাদাত লাভ করল। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, ‘সে কম আমল করে অধিক পুরস্কার পেল।’
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। উম্মু রুবায়্যি বিনতে
বারা, যিনি হারিস ইবনু সুরাকার মা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
নিকট এসে বলেন, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনি হারিসাহ (রাঃ) সম্পর্কে আমাকে কিছু বলবেন কি?
হারিসা (রাঃ) বাদারের যুদ্ধে অজ্ঞাত তীরের আঘাতে শাহাদাত লাভ করেন। সে যদি জান্নাতবাসী
হয়ে থাকে তবে আমি সবর করব, তা না হলে আমি তার জন্য অবিরাম কাঁদতে থাকবো।’ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘হে হারিসার মা! জান্নাতে অসংখ্য বাগান আছে, আর তোমার ছেলে
সর্বোচ্চ জান্নাতুল ফেরদাউস পেয়ে গেছে।
আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, এক ব্যক্তি গনীমতের জন্য, এক ব্যক্তি
প্রসিদ্ধ হওয়ার জন্য এবং এক ব্যক্তি বীরত্ব দেখানোর জন্য জিহাদে শরীক হলো। তাদের মধ্যে
কে আল্লাহর পথে জিহাদ করল? তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কলিমা বুলন্দ থাকার উদ্দেশে
যুদ্ধ করল, সে-ই আল্লাহর পথে জিহাদ করল।’
(১২৩) (মুসলিম ৩৩/৪২ হাঃ ১৯০৪, আহমাদ ১৯৬১৩)
আল্লাহ্ তা‘আলার
বাণীঃ মদিনা্বাসী ও তাদের পার্শ্ববর্তী মরুবাসীদের পক্ষে সমীচীন নয় আল্লাহর রাসূলের
সঙ্গ ত্যাগ করে পেছনে থেকে যাওয়া, রাসূলের জীবনের চেয়ে নিজেদের জীবনকে প্রিয় মনে করা।
এ কারণে যে, আল্লাহর পথে তাদের যে পিপাসা, ক্লান্তি ও ক্ষুধা ক্লিষ্ট করে এবং তাদের
এমন পদক্ষেপ যা কাফিরদের ক্রোধের উদ্রেক করে, আর শত্রু পক্ষ থেকে যা কিছু তারা প্রাপ্ত
হয়, তার প্রতিটির বিনিময়ে তাদের জন্য একটি নেক ‘আমল লিখিত হয়। নিশ্চয় আল্লাহ নেককারদের
শ্রমফল বিনষ্ট করেন না। (আত্ তওবা ১২০)
‘আবদুর রাহমান ইবনু
জাবর (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহর
পথে যে বান্দার দু’পা
ধূলায় মলিন হয়, তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে এমন হয় না।’
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধ শেষে আমার পিতাকে (তার লাশ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটা অবস্থায় আনা হল এবং তাঁর সামনে রাখা হল। আমি তাঁর চেহারা খুলতে চাইলাম আমার গোত্রের লোকেরা আমাকে নিষেধ করল। এমন সময় তিনি কোন বিলাপকারিণীর বিলাপ ধ্বনি শুনতে পেলেন। বলা হলো, সে ‘আমরের কন্যা বা ভগ্নি। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সে কাঁদছে কেন? অথবা বলেছিলেন, সে যেন না কাঁদে। ফেরেশতামন্ডলী তাকে ডানা দ্বারা ছায়াদান করছেন।
মুগীরাহ ইবনু শু’বা
(রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের জানিয়েছেন, আমাদের ও প্রতিপালকের
পয়গাম। আমাদের মধ্যে যে শহীদ হলো সে জান্নাতে পৌঁছে গেল।
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
তোমরা জেনে রাখ, তরবারির ছায়া-তলেই জান্নাত।
খন্দকার নাজনীন সুলতানা ,
লেখক, সাংবাদিক।
No comments:
Post a Comment