Tuesday 3 October 2023

কাতার সোজা করা সালাতের পূর্ণতার অঙ্গ।

আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারগুলো সোজা করে নিবে, কেননা, কাতার সোজা করা সালাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। (মুসলিম ৪/২৮, হাঃ ৪৩৩, আহমাদ ১২৮১৩)

ইমামের পূর্বে মাথা উঠানো গুনাহ।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা তোমাদের কাতারসমূহের মধ্যে পরস্পর মিলে দাঁড়াও এবং কাতারসমূহের মধ্যে তোমরা পরস্পর নিকটবর্তী হও। এবং তোমাদের ঘাড়সমূহকে সমপর্যায়ে সোজা রাখ। সেই মহান সত্তার ক্বসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি শয়তানকে দেখি সে কাতারের ফাঁকসমূহে প্রবেশ করে যেন কালো কালো ভেড়ার বাচ্চা।

আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করে নাও। কেননা, আমি আমার পিছন হতেও তোমাদের দেখতে পাই। আনাস (রাযি.) বলেন আমাদের প্রত্যেকেই তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতাম।


 
যদি লোকেরা জানত যে, আওয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায়ের কী ফাযীলাত, তাহলে তারা এর জন্যপ্রতিযোগিতা করে আগেভাগে আসার চেষ্টা করতো। আরইশা ফজরের জামাআতের কী ফাযীলাত যদি তারা জানত তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হতো। এবং সামনের কাতারের কী ফাযীলাত তা যদি জানত, তাহলে এর জন্য তারা কুরআ ব্যবহার করতো।

কোন ব্যক্তি লোকদের ইমামাত করার জন্য অগ্রসর হলে যদি পূর্ব (নির্ধারিত) ইমাম এসে যান তাহলে তিনি পিছে সরে আসুন বা না আসুন উভয় অবস্থায় তাঁর সালাত আদায় হয়ে যাবে।

কয়েক ব্যক্তি কিরাআত পাঠে সমান হলে, তাদের মধ্যে বয়সে বড় ব্যক্তি ইমাম হবেন।

মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একদল যুবক একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে উপস্থিত হলাম এবং প্রায় বিশ রাত্রি আমরা সেখানে থাকলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু। তাই তিনি আমাদের বললেনঃ তোমরা যখন নিজ দেশে ফিরে গিয়ে লোকদের দ্বীন শিক্ষা দিবে, তখন তাদের সময়ে অমুক সালাত আদায় করতে বলবে এবং সময়ে অমুক সালাত আদায় করতে বলবে। অতঃপর যখন সালাতের সময় হয় তখন তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে বয়সে বড় ব্যক্তি ইমামাত করবে।


ইমামের
পূর্বে মাথা উঠানো গুনাহ।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন ইমামের পূর্বে মাথা উঠিয়ে ফেলে, তখন সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ্ তাআলা তার মাথা গাধার মাথায় পরিণত করে দিবেন, তার আকৃতি গাধার আকৃতি করে দেবেন। (মুসলিম /২৫, হাঃ ৪২৭ আহমাদ ১০৫৫১)

যদি ইমাম সালাত সম্পূর্ণভাবে আদায় না করেন আর মুক্তাদীগণ তা সম্পূর্ণভাবে আদায় করেন, তবে তার সওয়াব তোমরা পাবে। আর যদি ইমাম  ভুল করে, তাহলে ভুলত্রুটির দায়িত্ব তাদের ইমামের উপরই বর্তাবে।

দুজন সালাত আদায় করলে, মুক্তাদী ইমামের ডানপাশে সোজাসুজি দাঁড়াবে।ইবনুআব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আমার খালা (মায়মুনা (রাযি.)-এর নিকট রাত্রি যাপন করলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সালাতে দাঁড়ালেন, আমিও তাঁর সাথে সালাত আদায় করতে দাঁড়ালাম। আমি তাঁর বামপাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তিনি আমার মাথা ধরে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করালেন।

যদি লোকেরা জানত যে, আওয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায়ের কী ফাযীলাত, তাহলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করে আগেভাগে আসার চেষ্টা করতো। আরইশা ফজরের জামাআতের কী ফাযীলাত যদি তারা জানত তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হতো। এবং সামনের কাতারের কী ফাযীলাত তা যদি জানত, তাহলে এর জন্য তারা কুরআ ব্যবহার করতো।

একাকী সালাত আদায় করলে ইচ্ছানুযায়ী দীর্ঘায়িত করতে পারে।

 আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে, তখন যেন সে সংক্ষেপ করে। কেননা, তাদের মাঝে দুর্বল, অসুস্থ বৃদ্ধ রয়েছে। আর যদি কেউ একাকী সালাত আদায় করে, তখন ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে। (মুসলিম /৩৭, হাঃ ৪৬৭, আহমাদ ৭৪৭৯)

শিশুর কান্নাকাটির কারণে সালাত সংক্ষেপ করা।

আবু ক্বাতাদাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি অনেক সময় দীর্ঘ করে সালাত আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে দাঁড়াই। পরে শিশুর কান্নাকাটি শুনে সালাত সংক্ষেপ করি। কারণ শিশুর মাকে কষ্টে ফেলা আমি পছন্দ করি না।

নিজের সালাত আদায় করার পর অন্য লোকের ইমামাত করা।

জাবির (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুআয (রাযি.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে সালাত আদায় করে নিজ গোত্রে ফিরে গিয়ে তাদের ইমামাত করতেন।

আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (রোগে) পীড়িত হয়ে পড়েছিলেন, বিলাল (রাযি.) এসে সালাতের কথা বললেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবূ বকরকে বল, লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে। আমি বললাম, হেআল্লাহর রাসূল! আবূ বকর (রাযি.) অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের লোক। তিনি যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন সাহাবীগণকে কিছুই শুনাতে পারবেন না। যদি আপনিউমার (রাযি.)-কে নির্দেশ দেন (তবে ভাল হয়) তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেনঃ লোকদের নিয়ে আবূ বকর (রাযি.)-কে সালাত আদায় করতে বল। আমি হাফ্সাহ (রাযি.)-কে বললাম, তুমি তাঁকে একটু বল যে, আবূ বকর (রাযি.) অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের লোক। তিনি যখন আপনার বদলে সে স্থানে দাঁড়াবেন, তখন সাহাবীগণকে কিছুই শোনাতে পারবেন না। যদি আপনিউমার (রাযি.)-কে নির্দেশ দিতেন (তবে ভাল হতো) শুনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা ইউসুফের সাথী নারীদেরই মতো। আবূ বকরকে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে বল। আবূ বকর (রাযি.) লোকদের নিয়ে সালাত শুরু করলেন। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে একটু সুস্থবোধ করলেন এবং দুজন সাহাবীর কাঁধে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে মসজিদে গেলেন। তাঁর দু পা মাটির উপর দিয়ে হেঁচড়ে যাচ্ছিল। আবূ বকর (রাযি.) যখন তাঁর আগমন টের পেলেন, পিছনে সরে যেতে উদ্যত হলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি ইঙ্গিত করলেন (স্বস্থানে থাকার জন্য) অতঃপর তিনি এসে আবূ বকর (রাযি.)-এর বামপাশে বসে গেলেন। অবশেষে আবূ বকর (রাযি.) দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। আর সাহাবীগণ আবূ বকর (রাযি.)-এর সালাতের অনুসরণ করছিল।


ইমামের
সন্দেহ হলে মুক্তাদীদের মত গ্রহণ করাউচিত।

 আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত দু রাকআত আদায় করলেন। তাঁকে বলা হল, আপনি দু রাকআত সালাত আদায় করেছেন। তখন তিনি আরও দুরাকআত সালাত আদায় করলেন এবং সালাম ফিরানোর পর দুটি (সাহু) সিজদা্ করলেন।

ইক্বামাতের সময় এবং এর পরে কাতার সোজা করতে হবে।

 নুমান ইবনু বশীর (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নিবে, তা না হলে আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করে দিবেন। (মুসলিম /২৮, হাঃ ৪৩৬, আহমাদ ১৮৪১৭)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পানিতে ডুবে, কলেরায়, প্লেগে এবং ভূমিধসে বা চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তিরা শহীদ।

কাতার সোজা করা সালাতের পূর্ণতার অঙ্গ।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অনুসরণ করার জন্যই ইমাম নির্ধারণ করা হয়। কাজেই তার বিরুদ্ধাচরণ করবে না। তিনি যখন রুকূ করেন তখন তোমরাও রুকু করবে। তিনি যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  বলেন, তখন তোমরা رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ  বলবে। তিনি যখন সিজদা্ করবেন তখন তোমরাও সিজদা্ করবে। তিনি যখন বসে সালাত আদায় করেন, তখন তোমরাও সবাই বসে সালাত আদায় করবে। আর তোমরা সালাতে কাতার সোজা করে নিবে, কেননা কাতার সোজা করা সালাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। (৭৩৪; মুসলিম /১৯, হাঃ ৪১৪)

জামাআতে দাঁড়াবার সময় পায়ের গিটের সাথে পার্শ্ববর্তী মুসল্লীর পায়ের গিট মিলিয়ে এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে পার্শ্ববর্তী মুসল্লীর বাহু মিলিয়ে কাতারবন্দী হয়ে সালাত আদায় করতে হবে। দুই মুসল্লীর মাঝখানে ফাঁক ফাঁক করে দাঁড়ানোর কথা কোন হাদীসে নাই।

কেউ ইমামের বামপাশে দাঁড়ালে ইমাম তাকে পিছনে ঘুরিয়ে ডানপাশে দাঁড় করালে সালাত আদায় হবে।

 ইবনুআব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন একরাতে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে সালাত আদায় করতে গিয়ে তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথার পিছনের দিক ধরে তাঁর ডানপাশে নিয়ে আসলেন।

মহিলা একজন হলেও ভিন্ন কাতারে দাঁড়াবে।

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমাদের ঘরে আমি একটি ইয়াতীমছেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলাম। আর আমার মা উম্মু সুলাইম (রাযি.) আমাদের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

হাসান (রহ.) বলেন, তোমার ইমামের মধ্যে নহর থাকলেও ইকতিদা করতে অসুবিধা নেই। আবূ মিজলায (রহ.) বলেন, যদি ইমামের তাকবীর শোনা যায় তাহলে ইমাম মুক্তাদীর মধ্যে রাস্তা বা দেয়াল থাকলেও ইক্তিদা করা যায়।

আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর একটি চাটাই ছিল। তিনি তা দিনের বেলায় বিছিয়ে রাখতেন এবং রাতের বেলা তা দিয়ে কামরা বানিয়ে নিতেন। সাহাবীগণ তাঁর পিছনে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ান এবং তাঁর পিছনে সালাত আদায় করেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাঁর অনুসরণের জন্য। তাই যখন তিনি তাকবীর বলেন, তখন তোমরাও তাকবীর বলবে, যখন তিনি রুকূ করেন তখন তোমরাও রুকূ করবে। যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  বলেন, তখন তোমরা رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ বলবে আর তিনি যখন সিজদা্ করেন তখন তোমরাও সিজদা্ করবে। যখন তিনি বসে সালাত আদায় করেন তখন তোমরাও বসে সালাত আদায় করবে।

নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাম হাতের পিঠ, কব্জি বাহুর উপর ডান হাত রাখতেন। [(আবূ দাউদ, নাসাঈ)

সালাতে  বিনয়, নম্রতা, একাগ্রতা, নিষ্ঠা তন্ময়তা আবশ্যক।

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা রুকূ সিজদা্গুলো যথাযথভাবে আদায় করবে। আল্লাহর শপথ! আমি আমার পিছনে হতে বা রাবী বলেন, আমার পিঠের পিছনে হতে তোমাদের দেখতে পাই, যখন তোমরা রুকূ সিজদা্ কর। (৪১৯; মুসলিম /২৪, হাঃ ৪২৫)

খন্দকার নাজনীন সুলতানা ,

লেখক, সাংবাদিক।

 

No comments:

Post a Comment