Thursday 5 October 2023

সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদীর কিরাআত পড়া জরুরী।

(আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ) ’’তোমার প্রতিপালক ভুল করেন না’’- (সূরাহ্ মারইয়াম ১৯/৬৪)। ’’নিশ্চয় তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’’ (সূরাহ্ আল-আহযাব ৩৩/২১)

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুসলিমগণ ফজরের সালাতে রত এ সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়িশাহ্ (রাযি.)-এর হুজরার পর্দা উঠালে তাঁরা চমকে উঠলেন। তিনি তাঁদের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, তাঁরা কাতারবদ্ধ হয়ে আছেন। তা দেখে তিনি মুচকি হাসলেন। আবূ বকর (রাযি.) তাঁর ইমামাতের স্থান ছেড়ে দিয়ে কাতারে শামিল হবার জন্য পিছিয়ে আসতে চাইলেন। তিনি মনে করেছিলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হতে চান। মুসলিমগণও সালাত ছেড়ে দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। তিনি ইঙ্গিতে তাঁদের বললেন, তোমরা তোমাদের সালাত পুরো করো। অতঃপর তিনি পর্দা ফেলে দিলেন। এ দিনেরই শেষে তাঁর ওফাত হয়।

আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ ’’আর যখন তোমরা সালাতের জন্য আহবান কর, তখন তারা একে হাসি-তামাশা ও খেলা বলে মনে করে। কারণ তারা এমন লোক যাদের বোধশক্তি নেই-’’ (সূরাহ্ আল-মায়িদাহ ৫/৫৮)। আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেছেনঃ ’’আর যখন জুমুআর দিনে সালাতের জন্য ডাকা হয়।’’ (সূরাহ্ আল-জুমুআহ ৬২/৯)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন‘আমীন বলেন, তখন তোমরাও ‘আমীন বলো। কেননা, যার ‘আমীন (বলা) ও মালাইকাহর ‘আমীন (বলা) এক হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ‘আমীন বলতেন। (৬৪০২; মুসলিম ৪/১৮, হাঃ ৪১০, আহমাদ ৮২৪৭)

আত্বা বলেনঃ “আমীন একটি দুআ। ইব্‌নু জুবায়র (রাঃ) আমীন বলেছেন এবং তাঁর পিছনের লোকেরা বলেছেন এমন কি মসজিদ আমীন ধ্বনিতে গুঞ্জরিত হয়েছিল । (বুখারী, তাগলীকুত তালীক ২/৩১৮, হাফিয ইব্‌নু হাজার)

ওয়ায়িল বিন হুজর (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে “গায়রিল মাগযূবি ‘আলাইহিম অলায্‌যাল্লীন পড়তে শুনেছি। অতঃপর তিনি নিজের স্বরকে উচ্চ করে আমীন বলেছেন ।

নামাজের মধ্যে সূরা আল ফাতিহা পাঠ করার শেষে আমীন (آمِينَ)  বলার অর্থ হলো এই যে, হে আল্লাহ! আমি সূরা আল ফাতিহার মাধ্যমে যে দোয়াটি আপনার নিকটে করেছি, সেই দোয়াটি আমার আপনি কবুল করুন।

নামাজ পড়ার অবস্থায় ইমাম, মোকতাদী এবং একাকী নামাজ আদায়কারীর জন্য সূরা আল ফাতিহা পাঠ করার শেষে আমীন (آمِينَ)  বলা একটি ভালো কাজ।

নাফি (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাযি.) বলতেন যে, মুসলিমগণ যখন মদিনা্য় আগমন করেন, তখন তাঁরা সালাতের সময় অনুমান করে সমবেত হতেন। এর জন্য  কোন ঘোষণা দেয়া হতো না। একদা তাঁরা এ বিষয়ে আলোচনা করলেন। কয়েকজন সাহাবী বললেন,  নাসারাদের ন্যায় নাকূস বাজানোর ব্যবস্থা করা হোক। আর কয়েকজন বললেন, ইয়াহূদীদের শিঙ্গার ন্যায় শিঙ্গা ফোঁকানোর ব্যবস্থা করা হোক। ‘উমার (রাযি.) বললেন, সালাতের ঘোষণা দেয়ার জন্য তোমরা কি একজন লোক পাঠাতে পার না? তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে বিলাল, উঠ এবং সালাতের জন্য ঘোষণা দাও। (মুসলিম ৪/১, হাঃ ৩৭৭, আহমাদ ৬৩৬৫)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমা ও কিরাআতের মধ্যে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মাতাপিতা আপনার উপর কুরবান হোক, তাকবীর ও কিরাআত এর মধ্যে চুপ থাকার সময় আপনি কী পাঠ করে থাকেন? তিনি বললেনঃ এ সময় আমি বলি-

‘‘হে আল্লাহ! আমার এবং আমার গুনাহের মধ্যে এমন ব্যবধান করে দাও যেমন ব্যবধান করেছ পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ আমাকে আমার গুনাহ হতে এমনভাবে পবিত্র কর যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার হয়। হে আল্লাহ আমার গোনাহকে বরফ, পানি ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও।’’ (মুসলিম ৫/২৭, হাঃ ৫৯৮, আহমাদ ৭১৬৭)

আয়িশাহ্ (রাযি.) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে কুসূফ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন, তোমরা যখন আমাকে পিছিয়ে আসতে দেখেছিলে তখন আমি জাহান্নাম দেখেছিলাম; তার এক অংশ অপর অংশকে বিচূর্ণ করছে।

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি মিম্বরে আরোহণ করলেন এবং মসজিদের কিব্লার দিকে ইশারা করে বললেন, এইমাত্র আমি যখন তোমাদের নিয়ে সালাত আদায় করছিলাম তখন এ দেওয়ালের সামনের দিকে আমি জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম। আজকের মতো এত ভাল ও মন্দ আমি আর দেখিনি, একথা তিনি তিনবার বললেন।

সালাতে এদিক ওদিক তাকান প্রসংগে ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সালাতে এদিক ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ এটা এক ধরনের ছিনতাই, যার মাধ্যমে শয়তান বান্দার সালাত হতে অংশ বিশেষ ছিনিয়ে নেয়।

আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি নকশা করা চাদর পরে সালাত আদায় করলেন। সালাতের পরে তিনি বললেনঃ এ চাদরের কারুকার্য আমার মনকে আকর্ষিত করেছিল। এটি আবূ জাহমের নিকট নিয়ে যাও এবং এর বদলে একটি ‘আম্বজানিয়্যাহ (নকশা ছাড়া মোটা কাপড়) নিয়ে এসো।

সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদীর কিরাআত পড়া জরুরী, মুকীম অবস্থায় হোক বা সফরে, সশব্দে কিরাআতের সালাত হোক বা নিঃশব্দে সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদীর কিরাআত পড়া জরুরী।

উবাদাহ ইবনু সমিত (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাতে সূরাহ্ আল-ফাতিহা পড়ল না তার সালাত হলো না। (মুসলিম ৪/১১, হাঃ ৩৯৪, আহমাদ ২২৮০৭)

সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদীর কিরাআত পড়া জরুরী, মুকীম অবস্থায় হোক বা সফরে, সশব্দে কিরাআতের সালাত হোক বা নিঃশব্দে সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদীর কিরাআত পড়া জরুরী।

আবূ কাতাদাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর ও ‘আসরের প্রথম দু রাকআতে সূরাহ্ আল-ফাতিহার সাথে আর একটি করে সূরাহ্ পড়তেন। আর কখনো কখনো কোন আয়াত আমাদের শুনিয়ে পড়তেন।

 

আবূ কাতাদাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের প্রথম দুরাকআতে সূরাহ্ আল-ফাতিহা দুটি সূরাহ্ পড়তেন এবং শেষ দুরাকআতে সূরাহ্ আল-ফাতিহা পাঠ করতেন এবং তিনি কোন কোন আয়াত আমাদের শোনাতেন, আর তিনি প্রথম রাকআতে যত দীর্ঘ করতেন, দ্বিতীয় রাকআতে তত দীর্ঘ করতেন না।আসরে এবং ফজরেও রকম করতেন।

জুবায়র ইবনু মৃতইম (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মাগরিবের সালাতে সূরাহ্ আত-তূর পড়তে শুনেছি। ( মুসলিম /৩৫)

বারাআ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কেইশার সালাতে وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ পড়তে শুনেছি। আমি তাঁর চেয়ে কারো সুন্দর কন্ঠ অথবা কিরাআত শুনিনি।

প্রথম দু রাকআতে কিরাআত দীর্ঘ করা শেষ দু রাকআতে তা সংক্ষেপ করা।

ব্যাপারে  জাবির ইবনু সামুরাহ (রাযি.)  বলেন, ‘উমার (রাযি.) সা (রাযি.)-কে বললেন, আপনার বিরুদ্ধে তারা (কূফাবাসীরা) সর্ব বিষয়ে অভিযোগ করেছে, এমনকি সালাত সম্পর্কেও। সা (রাযি.) বললেন, আমি প্রথম দুরাকআতে কিরাআত দীর্ঘ করে থাকি এবং শেষের দু রাকআতে তা সংক্ষেপ করি। আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে যেমন সালাত আদায় করেছি, তেমনই সালাত আদায়ের ব্যাপারে আমি ত্রুটি করিনি।উমার (রাযি.) বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন, আপনার ব্যাপারে ধারণা এমনই, কিংবা (তিনি বলেছিলেন) আপনার সম্পর্কে আমার রকমই ধারণা।

ইবনুআব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজনসাহাবীকে সঙ্গে নিয়ে উকায বাজারের উদ্দেশে রওয়ানা করেন। আর দুষ্ট জিন্নদের উর্ধ্বলোকের সংবাদ সংগ্রহের পথে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয় এবং তাদের দিকে অগ্নিপিন্ড নিক্ষিপ্ত হয়। কাজেই শয়তানরা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসে। তারা জিজ্ঞেস করলো, তোমাদের কী হয়েছে? তারা বলল, আমাদের এবং আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে বাধা দেখা দিয়েছে এবং আমাদের দিকে অগ্নিপিন্ড ছুঁড়ে মারা হয়েছে। তখন তারা বলল, নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ একটা কিছু ঘটেছে বলেই তোমাদের এবং আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই, পৃথিবীর পূর্ব এবং পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত ঘুরে দেখ, কী কারণে তোমাদের আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে বাধা সৃষ্টি হয়েছে? তাই তাদের যে দলটি তিহামার দিকে গিয়েছিল, তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দিকে অগ্রসর হল। তিনি তখনউকায বাজারের পথে নাখ্লা নামক স্থানে সাহাবীগণকে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করছিলেন। তারা যখন কুরআন শুনতে পেল, তখন সেদিকে মনোনিবেশ করলো। অতঃপর তারা বলে উঠলো, আল্লাহর শপথ! এটিই তোমাদের আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে বাধা সৃষ্টি করেছে। এমন সময় যখন তারা গোত্রেরর নিকট ফিরে আসল এবং বলল হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এক আশ্চর্যজনক কুরআন শুনেছি, যা সঠিক পথ নির্দেশ করে, আমরা এতে ঈমান এনেছি এবং কখনো আমরা আমাদের প্রতিপালকের সঙ্গে কাউকে শরীক স্থির করব না। প্রসঙ্গেই আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি قُلْ أُوحِيَ إِلَيَّ সূরাহ্ নাযিল করেন। মূলতঃ তাঁর নিকট জিনদের কথাবার্তাই ওয়াহীরূপে অবতীর্ণ করা হয়েছে। (৪৯২১; মুসলিম /৩৩ হাঃ ৪৪৯)

যুহরে আসরে নিঃশব্দে কিরাআত পড়া, প্রসংগে  আবূ মামার (রহ.)বলেন, আমরা খাব্বাব (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর আসরের সালাতে কিরাআত পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কী করে বুঝলেন? তিনি বললেন, তাঁর দাড়ি নড়াচড়া দেখে।

আবূ কাতাদাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাতের প্রথম রাকআতে কিরাআত দীর্ঘ করতেন দ্বিতীয় রাকআতে সংক্ষিপ্ত করতেন এবং রকম করতেন ফজরের সালাতেও।

খন্দকার নাজনীন সুলতানা ,লেখক, সাংবাদিক।

#Islam  #Hadis #Article #Hazrat Muhammed (SAW) ##ইসলাম #হাদিস #নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম#khandaker nazneen sultana#islamic article

 

 

 


No comments:

Post a Comment