Saturday 24 August 2013

আল্লাহ্ কতৃক মৃতকে জীবন দান




মহান আল্লাহ তা’য়ালার অপার শক্তি। তিনি জীবন দান করেন। মৃত্যু ঘটান। আবার মৃতকে পূনরায় জীবিত করতে পারেন। একদা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আবদার করলেন, হে আল্লাহ আপনি কিভাবে মৃতকে জীবিত করেন, দেখার খুব ইচ্ছে আমার। আল্লাহ তা’য়ালা বললেন, আচ্ছা, তবে চারটি পাখী সংগ্রহ করুন এবং পেলে পুষে এদের সাথে ভালোভাবে  পরিচিত হন। অতপর: এই পাখীগুলোকে জবাই করে টুকরো করে এক একটার এক এক অংশ এক এক পাহাড়ে রেখে আসুন। তারপর ঐ পাখীগুলোকে ডাকুন, দেখবেন আপনার চোখের সামনে প্রত্যেকটি পাখীর বিভিন্ন অংশ একত্রিত হয়ে পুনরায় জীবন লাভ করে আপনার কাছে দৌড়ে আসবে। আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান, সুকৌশলী, আল্লাহ সবই পারেন- মনে সর্বদাই এই বিশ্বাস রাখতে হবে।

আল্লাহর পরামর্শমতো ইব্রাহীম (আঃ) চারটি পাখি সংগ্রহ করলেন, এগুলোকে জবাই করে পালক উপড়িয়ে ফেললেন এবং টুকরো টুকরো করলেন । তারপর কয়েক ভাগে ভাগ করে এক এক ভাগ এক এক পাহাড়ে রেখে এলেন। পাখিগুলোর মাথা ইব্রাহীম (আঃ) নিজ হাতে রেখেছিলেন। তারপর আল্লাহর কথামতো ঐ পাখিগুলোকে ইব্রাহীম (আঃ) ডাকলেন। তখন দেখলেন, প্রতিটি পাখীর পালক উড়ে এসে একটি অপরটির সাথে মিলিত হচ্ছে। রক্তের কণাগুলো অপর রক্ত কণাগুলোর সাথে মিলিত হচ্ছে। গোশতের এক একটা অংশ অপর অংশের সাথে মিলিত হচ্ছে। এইরুপে প্রতিটি পাখির নিজ নিজ অংশগুলো একত্রে মিলিত হলো। তারপর পাখিগুলো হেঁটে হেঁটে ইব্রাহীম (আঃ) এর হাতে রাখা মাথাগুলোর সাথে মিলিত হবার জন্য এগিয়ে এল। ইব্রাহীম (আঃ) একটার দেহের সামনে অপর পাখির মাথা রাখলেন, মিলিত হল না। সব দেহগুলো নিজ নিজ মাথার সাথে খুব সহজেই মিলে গেল। ইব্রাহীম (আঃ) এর মনের ইচ্ছা পূরন হলো। তিনি নিজ চোখে দেখলেন কিভাবে আল্লাহর অপার শক্তিতে মৃতও জীবিত হয়ে যায়।

আল্লাহ্ তা’য়ালা সর্বক্ষমতার অধিকারী। তার জন্য কোন বিষয়ই অসম্ভব নয়। তিনি যা ইচ্ছে করেন, বিনা বাঁধায় তা সম্পন্ন হয়। আল্লাহ তা’য়ালা হেকমত ওয়ালা বিজ্ঞ। তাঁর হেকমত ও বিজ্ঞতা প্রকাশ পায় তাঁর বানীতে ও কাজে।তাঁর নিয়ম কানুন ও ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে আর একটি ঘটনার উল্লেখ করা যায়।

একদিন নবী করীম (সাঃ) তাঁর পূর্ববর্তী উম্মতের একজন লোকের কথা আলোচনা করলেন। লোকটি বিপুল পরিমান ধন সম্পদের অধিকারী ছিলেন। বৃদ্ধ বয়সে লোকটি তার পুত্রদেরকে ডেকে বললেন, তোমরা তোমাদের পিতাকে কেমন মনে কর? সন্তানরা বললো, ’অতি উত্তম’। লোকটি বললো , তোমাদের পিতা এমন কোন কাজই করেনি যা আল্লাহর দরবারে ভালো কাজ হিসাবে গৃহিত হবে। আমি আশংকা করছি, মৃত্যুর পর আল্লাহ আমাকে অবশ্যই আযাব দিবেন। তাই মৃত্যুর পর আমার দেহ তোমরা আগুনে পুড়িয়ে ফেলবে। আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেলে তা পেষন করবে। তারপর প্রবল ঝড়ের দিনে তার অর্ধেকটা সমুদ্রে এবং অর্ধেকটা বাতাসে উড়িয়ে দেবে। পুত্ররা পিতার ইচ্ছা অনুযায়ী তাই করলো।

অতপর: আল্লাহর নির্দেশে হলো ‘হয়ে যাও’। তৎক্ষনাত ঐ ব্যক্তি জীবিত হয়ে দাঁড়ালো। আল্লাহ তা’য়ালা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এরূপ করলে কেন? সে উত্তর দিল, হে আল্লাহ আমি একমাত্র আল্লাহ আপনার ভয়ে ভীত হয়ে এরূপ করেছিলাম। মহান আল্লাহ তা’য়ালার মায়া হলো। আল্লাহ লোকটির সব গুনাহ মাফ করে দিলেন।     

আল্লাহ তা’য়ালা অতি মহান, অত্যন্ত দয়াল। তাই, আমাদের সব সময়ই উচিৎ আল্লাহকে ভয় করা। শ্রদ্ধা করা, ভালোবাসা। যা কিছু চাইবার, তা আল্লাহর কাছে চাওয়া। যে ব্যক্তি আল্লাহকে স্মরণ করে কাঁদবে। সে কেয়ামতের কঠিন হাশরের মাঠে আল্লাহর রহমতের ছায়াতলে থাকবে। ইনশাআল্লাহ।  
-------------------------------------------------------------------
তথ্যসুত্র ঃ
আলকোরআন:
পারা; ৩ রুকু ৩, পারা; ১৭, রুকু ৭ । বুখারী শরীফ হাদীস নং ১৬২৮,২৪৫০।

প্রকাশ ঃ পাক্ষিক ইতিকথা, ১৫ জানুয়ারী, ২০০৯। সাপ্তাহিক মুসলিম জাহান, ১১ ফেব্র“য়ারী, ২০০৯ ।  
------------------------------------------------------------------

By 
Khandaker nazneen Sultana
Journalist

No comments:

Post a Comment