Monday, 18 September 2023

আল্লাহ্ যার মঙ্গল চান, তাঁকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন।


এত অবুঝ শিশু পৃথিবী ভরে ,

সকলকে আমি বোঝাই কেমন করে ?

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ ’’তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার আল্লাহ তাআলা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন এবং তাদেরকেও (বাড়িয়ে দিবেন) যাদেরকে ইলম দেয়া হয়েছে। আর আল্লাহ তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে পূর্ণ অবগত আছেন’’- (সূরাহ্ আল-মুজাদালাহ্ ৫৮/১১)

 মহান আল্লাহর বাণীঃ ’’হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দাও।’’ (সূরাহ্ তোয়াহা ২০/১১৪)

উমার (রাযি.) বলেন, তোমরা নেতা হবার পূর্বেই জ্ঞানার্জন করে নাও। আবূ ’’আবদুল্লাহ্ (বুখারী) বলেন, আর নেতা বানিয়ে দেয়ার পরও, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগণ বৃদ্ধ বয়সেওইল্ম অর্জন করেছেন।

আলিমগণই নবীগণের উত্তরাধিকারী। তাঁরা জ্ঞানের উত্তরাধিকারী হয়েছেন। যে জ্ঞান অর্জন করে সে বিরাট অংশ লাভ করে। আর যে ব্যক্তিইল্ম অর্জনের জন্য পথ চলে, আল্লাহ্ তাআলা তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃআল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলিমগণই তাঁকে ভয় করে- (সূরাহ্ ফাতির ৩৫/২৮) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ ’’আলিমগণ ব্যতীত তা কেউ অনুধাবন করে না’’- (সূরাহ্ আল-’আনকাবুত ২৯/৩৪) অন্যত্র আল্লাহ বলেনঃ তারা বলবে, ’আমরা যদি শুনতাম অথবা উপলব্ধি করতাম, তাহলে আমরা জাহান্নামবাসী হতাম না- (সূরাহ্ মুল্ক ৬৭/১০) অন্যত্র তিনি বলেনঃ ’’বল, যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?’ (সূরাহ্ যুমার ৩৯/) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ্ যার কল্যাণ কামনা করেন তাকে দ্বীনেরইল্ম দান করেন। আর অধ্যয়নের মাধ্যমেই জ্ঞান অর্জিত হয়।

আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম জনসম্মুখে কিছু আলোচনা করছিলেন। ইতোমধ্যে তাঁর নিকট জনৈক বেদুঈন এসে জিজ্ঞেস করল, ’কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আলোচনায় রত থাকলেন। এতে কেউ কেউ বললেন, লোকটি যা বলেছে তিনি তা শুনেছেন কিন্তু তার কথা পছন্দ করেননি। আর কেউ কেউ বললেন বরং তিনি শুনতেই পাননি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলোচনা শেষে বললেনঃক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়?’ সে বলল, ’এই যে আমি, হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেনঃ যখন আমানত নষ্ট করা হয় তখন কিয়ামতের প্রতীক্ষা করবে। সে বলল, কিভাবে আমানত নষ্ট করা হয়? তিনি বললেনঃযখন কোন অনুপযুক্ত ব্যক্তির উপর কোন কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়, তখন তুমি কিয়ামতের অপেক্ষা করবে।

 অযুর জায়গায় যদি দৃশ্যমান প্রলেপ পড়ে এমন কিছু থাকে, যার কারণে শরীরের চামড়ায় পানি পৌঁছবে না এমন হয়ে যায়, তবে তা সরানো পর্যন্ত অযু হবে না। যেমন- নেইল পালিশ, প্রলেপ বিশিষ্ট রঙ, কড়া মেকআপ ইত্যাদি। অযু বা গোসল বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য তা অবশ্যই দূর করতে হবে।

 যারা অযু করার ক্ষেত্রে কসুর করবে তাদের জন্য কঠোর শাস্তির ঘোষণা প্রদান করা হয়েছে।

 

আবদুল্লাহ্ ইবনুআমর (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক সফরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের পিছনে পড়ে গেলেন। পরে তিনি আমাদের নিকট পৌঁছলেন, এদিকে আমরা (আসরের) সালাত আদায় করতে বিলম্ব করে ফেলেছিলাম এবং আমরা উযূ করছিলাম। আমরা আমাদের পা কোনমতে পানি দ্বারা ভিজিয়ে নিচ্ছিলাম। তিনি উচ্চৈস্বঃরে বললেনঃ পায়ের গোড়ালিগুলোর (শুকনো থাকার) জন্য জাহান্নামেরআযাব রয়েছে। তিনি দুবার বা তিনবার কথা বললেন। (৯৬, ১৬৩; মুসলিম / হাঃ ২৪১, আহমাদ ৬৮২৩)

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমরা মসজিদে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন জনৈক ব্যক্তি সওয়ার অবস্থায় প্রবেশ করল। মসজিদে (প্রাঙ্গণে) সে তার উটটি বসিয়ে (বেঁধে) দিল। অতঃপর সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলল, ’তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন্ ব্যক্তি?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাদের সামনেই হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। আমরা বললাম, ’এই হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ফর্সা ব্যক্তিটিই হলেন তিনি।

 

অতঃপর লোকটি তাঁকে লক্ষ্য করে বলল, ’হে আবদুল মুত্তালিবের পুত্র!’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃআমি তোমার উত্তর দিচ্ছি? লোকটি বলল, ’আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করব এবং সে প্রশ্ন করার ব্যাপারে কঠোর হব, এতে আপনি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন না।তিনি বললেন, ’তোমার যা মনে চায় জিজ্ঞেস কর।

 

সে বলল, ’আমি আপনাকে স্বীয় প্রতিপালক এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতিপালকের শপথ দিয়েজিজ্ঞেস করছি, আল্লাহ্ কি আপনাকে সমগ্র মানবকুলের প্রতি রাসূলরূপে প্রেরণ করেছেন?’ তিনি বললেনঃআল্লাহ্ সাক্ষী, হ্যাঁ। সে বলল, ’আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি, আল্লাহ্ই কি আপনাকে দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের আদেশ দিয়েছেন?’ তিনি বললেনঃআল্লাহ্ সাক্ষী, হ্যাঁ। সে বলল, ’আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি, আল্লাহ্ই কি আপনাকে বছরের মাসে (রমাযান) সিয়াম পালনের আদেশ দিয়েছেন?’ তিনি বললেনঃআল্লাহ্ সাক্ষী, হ্যাঁ। সে বলল, ’আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি, আল্লাহ্ই কি আপনাকে আদেশ দিয়েছেন, আমাদের ধনীদের থেকে এসব সদাক্বাহ (যাকাত) আদায় করে দরিদ্রদের মাঝে বন্টন করে দিতে?’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃআল্লাহ্ সাক্ষী, হ্যাঁ। অতঃপর লোকটি বলল, ’আমি বিশ্বাস স্থাপন করলাম আপনি যা (যে শরীআত) এনেছেন তার উপর। আর আমি আমার গোত্রের রেখে আসা লোকজনের পক্ষে প্রতিনিধি, আমার নাম যিমাম ইবনু সালাবা, বানী সাআদ ইবনু বক্র গোত্রের একজন।

 

আবূ ওয়াক্বিদ আল-লায়সী (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদামসজিদে বসে ছিলেন; তাঁর সাথে আরও লোকজন ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনজন লোক আসলো। তন্মধ্যে দুজন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দিকে এগিয়ে আসলেন এবং একজন চলে গেলেন। আবূ ওয়াকিদ (রাযি.) বলেন, তাঁরা দুজন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর তাঁদের একজন মাজলিসের মধ্যে কিছুটা খালি জায়গা দেখে সেখানে বসে পড়লেন এবং অপরজন তাদের পেছনে বসলেন। আর তৃতীয় ব্যক্তি ফিরে গেল। যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবসর হলেন (সাহাবীদের লক্ষ্য করে) বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এই তিন ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলব না? তাদের একজন আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করল, আল্লাহ্ তাকে আশ্রয় দিলেন। অন্যজন লজ্জাবোধ করল, তাই আল্লাহ্ও তার ব্যাপারে লজ্জাবোধ করলেন। আর অপরজন (মাজলিসে হাযির হওয়া থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিলেন, তাই আল্লাহ্ও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। (৪৭৪; মুসলিম ৩৯/১০ হাঃ ৬১৭৬, আহমাদ ২১৯৬৬)

আনাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সহজ পন্থা অবলম্বন কর, কঠিন পন্থা অবলম্বন করো না, মানুষকে সুসংবাদ দাও, বিরক্তি সৃষ্টি করো না। (৬১২৫; মুসলিম ৩২/ হাঃ ১৭৩৪, আহমাদ ১৩১৭৪)

হুমায়দ ইবনুআবদুর রহমান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি মুআবিয়াহ (রাযি.)-কে খুৎবায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনেরইল্ম দান করেন। আমি তো বিতরণকারী মাত্র, আল্লাহ্ই (জ্ঞান) দাতা। সর্বদাই উম্মাত কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর হুকুমের উপর কায়িম থাকবে, বিরোধিতাকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (৩১১৬, ৩৬৪১,৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম ১২/৩৩ হাঃ ১০৩৭, আহমাদ ১৬৮৪৯, ১৬৮৭৮, ১৬৯১০)

 

ক্বায়স বিন হাযিম (রহ.) বলেন, আমিআবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযি.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেননবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেবল দুটি বিষয়ে ইর্ষা করা বৈধ; () সে ব্যক্তির উপর, যাকে আল্লাহ্ সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর তাকে বৈধ পন্থায় অকাতরে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন; () সে ব্যক্তির উপর, যাকে আল্লাহ্ তাআলা প্রজ্ঞা দান করেছেন, অতঃপর সে তার মাধ্যমে বিচার ফায়সালা করে তা অন্যকে শিক্ষা দেয়। (মুসলিম /৪৭ হাঃ ৮১৬, আহমাদ ৩৪৫১)

 

আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের এমন একটি হাদীস বর্ণনা করব যা আমার পর তোমাদের নিকট আর কেউ বর্ণনা করবে না। আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের কিছু আলামাত হলঃইল্ম হ্রাস পাবে, অজ্ঞতার প্রসার ঘটবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে, স্ত্রীলোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে, এমনকি প্রতি পঞ্চাশজন স্ত্রীলোকের জন্য মাত্র একজন পুরুষ হবে পরিচালক। ( মুসলিম ৪৭/ হাঃ ২৬৭১, )

 

আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (শেষ যামানায়) ‘ইল্ম উঠিয়ে নেয়া হবে, অজ্ঞতা ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে এবংহার্জ বেড়ে যাবে। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! ‘হার্জ কী? তিনি হাত দ্বারা ইঙ্গিত করে বললেনঃ রকম যেন তিনি এর দ্বারাহত্যা বুঝিয়েছিলেন।



যাবে
কোথা ?মানুষ  রুপী অমানুষ সব কিলবিলকরছে চারিপাশে।  

খন্দকার নাজনীন সুলতানা ,

লেখক , সাংবাদিক।

 

 

 

 

 

Sunday, 17 September 2023

ঈমানের স্নিগ্ধতা অন্তরের সাথে মিশে গেলে ঈমান ত্যাগ করা যায় না।

ঈমানের কতকগুলো ফরয, কতকগুলো হুকুম-আহকাম, বিধি-নিষেধ এবং সুন্নাত রয়েছে। যে এগুলো পরিপূর্ণরূপে আদায় করে তার ঈমান পূর্ণ হয়। আর যে এগুলো পূর্ণভাবে আদায় করে না, তার ঈমান পূর্ণ হয় না।

 উবায়দুল্লাহ্ ইবনু মূসা (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি।

১। আল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ্ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ আল্লাহ্র রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দান।

২। সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা

৩। যাকাত দেওয়া

৪। হাজ্জ (হজ্জ) করা এবং

৫। রামাদান এর সিয়াম পালন করা।

আল্লাহ্ তা আলার  বাণীঃ পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে কোন কল্যাণ নেই; কিন্তু কল্যাণ আছে কেউ ঈমান আনলে আল্লাহ তাআলার উপর, আখিরাত, ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ ও নবীগণের উপর ঈমান আনলে এবং আল্লাহ্‌র মুহাব্বতে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, অভাভগ্রস্থ, মুসাফির, সাহায্য-প্রার্থীদের এবং দাসত্ব মোচনের জন্য সম্পদ দান করলে, সালাত কায়িম করলে ও যাকাত দিলে এবং ওয়াদা দিয়ে তা পূরণ করলে, অর্থসংকটে, দুঃখ-কষ্টে ও যুদ্ধকালে ধৈর্য ধারণ করলে। তারাই সত্যপরায়ণ, ও তারা মুত্তাকী’’- (২ঃ ১৭৭)।’’অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ, যারা বিনয়-নম্র নিজেদের সালাতে ... (২৩ঃ ১-২)

প্রকৃত মুসলিম সে-ই, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করল, ইসলামের কোন কাজটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাবার খাওয়াবে ও পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দিবে।

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ করবে, যা নিজের জন্য পছন্দ করে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ

 আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ সেই পবিত্র সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তানের চেয়ে বে শি প্রিয় হই।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে, সে ঈমানের স্বাদ পায়। ১। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছুর থেকে প্রিয় হওয়া; ২। কাউকে খালিস আল্লাহ্‌র জন্যই মুহব্বত করা; ৩। কুফ্‌রীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করা।

 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পার্শ্বে একজন সাহাবীর উপস্থিতিতে তিনি ইরশাদ করেনঃ তোমরা আমার কাছে এই মর্মে বায়আত গ্রহণ কর যে, আল্লাহ্‌র সঙ্গে কিছু শরীক করবে না, চুরি করবে না, যিনা করবে না, তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দেবে না এবং নেক কাজে নাফরমানী করবে না। তোমাদের মধ্যে যে তা পূরণ করবে, তার বিনিময় আল্লাহ্‌র কাছে। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং দুনিয়াতে তার শাস্তি পেয়ে গেলে, তবে তা হবে তার জন্য কাফ্‌ফারা। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং আল্লাহ্ তা অপ্রকাশিত রাখলে, তবে তা আল্লাহ্‌র ইচ্ছাধীন। তিনি যদি চান, তাকে মাফ করে দেবেন আর যদি চান, তাকে শাস্তি দেবেন। আমরা এর উপর বায়আত গ্রহণ করলাম।

 রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ  আমি তোমাদের তুলনায় আল্লাহকে সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী। আর মারেফাত (আল্লাহ্‌র পরিচয়) অন্তরের কাজ। যেমন আল্লাহ্‌ ইরশাদ করেছেনঃ কিন্তু তিনি তোমাদের অন্তরের সংকল্পের জন্য দায়ী করবেন। (২ঃ ২২৫)

কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার ন্যায় অপছন্দ করা ঈমানের অঙ্গ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রহমতের বাতাস থেকেও অধিক দানশীল ছিলেন।

আবূ সুফিয়ান  বললেন , রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা এক আল্লাহ্র ইবাদত কর এবং তাঁর সঙ্গে কোন কিছুর শরীক করো না এবং তোমাদের বাপ-দাদার ভ্রান্ত মতবাদ ত্যাগ কর। আর তিনি আমাদের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার, সত্য কথা বলার, নিষ্কলুষ থাকার এবং আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার করার আদেশ দেন।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহ্র নামে)। আল্লাহ্র বান্দা ও তাঁর রাসুল মুহাম্মদএর পক্ষ থেকে রোম সম্রাট হিরাকল এর প্রতি। --শান্তি (বর্ষিত হোক) তার প্রতি, যে হিদায়াতের অনুসরণ করে। তারপর আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন, নিরাপদে থাকবেন। আল্লাহ্ আপনাকে দ্বিগুণ পুরষ্কার দান করবেন। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেন, তবে সব প্রজার পাপই আপনার উপর বর্তাবে। হে আহলে কিতাব! এস সে কথার দিকে, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই; যেন আমরা আল্লাহ্ ব্যতীত আর কারো ইবাদত না করি, কোন কিছুকেই তাঁর শরীক না করি এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ্ ব্যতীত রব রূপে গ্রহণ না করি। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলো, তোমরা সাক্ষী থাক, আমরা মুসলিম (৩:৬৪)।


খন্দকার  নাজনীন সুলতানা ,

লেখক সাংবাদিক


 

 

 

 

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ওহী নাযিল

আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি কীভাবে ওয়াহী শুরু হয়েছিল, মর্মে আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ ’’নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সেরূপ ওহী প্রেরণ করেছি যেরূপ নূহ তাঁর পরবর্তী নবীদের (নবীদের) প্রতি ওহী প্রেরণ করেছিলাম।’’ (সূরাহ্ আন-নিসা /১৬৩)

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটসর্বপ্রথম যে ওহী আসে, তা ছিল নিদ্রাবস্থায় বাস্তব স্বপ্নরূপে। যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন তা একেবারে প্রভাতের আলোর ন্যায় প্রকাশিত হতো। অতঃপর তাঁর নিকট নির্জনতা পছন্দনীয় হয়ে দাঁড়ায় এবং তিনিহেরা গুহায় নির্জনে অবস্থান করতেন।


আপন
পরিবারের নিকট ফিরে এসে কিছু খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে- এভাবে সেখানে তিনিএক নাগাড়ে বেশ কয়েক দিনইবাদাতে মগ্ন থাকতেন। অতঃপর খাদীজাহ (রাঃ)-এর নিকট ফিরে এসে আবার একই সময়ের জন্য কিছু খাদ্যদ্রব্য নিয়ে যেতেন। এভাবেহেরা গুহায় অবস্থানকালে তাঁর নিকট ওহী আসলো। তাঁর নিকট ফেরেশতা এসে বললো, ’পাঠ করুন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ [’’আমি বললাম, ’আমি পড়তে জানি না।]

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ [অতঃপর সে আমাকে জড়িয়ে ধরে এমনভাবে চাপ দিলো যে, আমার খুব কষ্ট হলো। অতঃপর সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো, ’পাঠ করুন আমি বললামঃ আমি তো পড়তে জানি না। সে দ্বিতীয়বার আমাকে জড়িয়ে ধরে এমনভাবে চাপ দিলো যে, আমার খুব কষ্ট হলো। অতঃপর সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললোঃপাঠ করুন আমি উত্তর দিলাম, ’আমি তো পড়তে জানি না। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর তৃতীয়বারে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। তারপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, ’’পাঠ করুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত পিন্ড থেকে, পাঠ করুন, আর আপনার রব অতিশয় দয়ালু’’- (সূরাহ্আলাক্ব ৯৬/-)

আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি প্রচন্ড শীতের দিনে ওহী নাযিলরত অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি। ওহী শেষ হলেই তাঁর কপাল থেকে ঘাম ঝরে পড়ত।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সর্বপ্রথম যে ওহী আসে, তা ছিল ঘুমের মধ্যে সত্যস্বপ্নরূপে।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একদা আমি হাঁটছি, হঠাৎ আসমান হতে একটি শব্দ শুনতে পেয়ে আমার দৃষ্টিকে উপরে তুললাম। দেখলাম, সেই ফেরেশতা, যিনি হেরা গুহায় আমার নিকট এসেছিলেন, আসমান যমীনের মাঝে একটি আসনে উপবিষ্ট। এতে আমি শংকিত হলাম। অবিলম্বে আমি ফিরে এসে বললাম, ‘আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর, আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর। অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা অবতীর্ণ করলেন, ‘‘হে বস্ত্রাবৃত রাসূল! () উঠুন, সতর্ক করুন; আর আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন; এবং স্বীয় পরিধেয় বস্ত্র পবিত্র রাখুন; () এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন।’’ (সূরাহ্ঃ মুদ্দাস্সির ৭৪/-)

তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি আপনার জিহবা তার সাথে নাড়াবেন না। এর সংরক্ষণ পাঠ করানোর দায়িত্ব আমারই। ” (৭৫:১৬-১৮)

 

খন্দকার নাজনীন সুলতানা ,

লেখক,সাংবাদিক।