আল্লাহকে ভয় কর, তবেই তোমরা সফলকাম হবেআল্লাহর বাণীঃ ‘‘তিনি সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য।’’ (নাহল ৮)
মহান আল্লাহর বাণীঃ হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা ধৈর্যধারণ
কর এবং ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা কর আর সদা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাক। আর আল্লাহকে ভয়
কর, তবেই তোমরা সফলকাম হবে। (আলে ইমরান ২০০)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ‘আযবা নামের একটি উষ্ট্রী ছিল। কোন উষ্ট্রী তার আগে যেতে পারত
না। হুমাইদ (রহ.) বলেন, কোন উষ্ট্রী তার আগে যেতে সক্ষম হতো না। একদা এক বেদুইন একটি
জওয়ান উটে চড়ে আসল এবং আযবা-এর আগে চলে গেল। এতে মুসলিমদের মনে কষ্ট হল। এমনকি নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-ও তা বুঝতে পারলেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর নিয়ম
এই যে, ‘দুনিয়ার সব কিছুরই উত্থানের পর পতন আছে।’
আমর ইবনু হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সাদা খচ্চর, কিছু যুদ্ধ সামগ্রী ও সামান্য ভূমি ছাড়া আর কিছুই
রেখে যাননি। এগুলোও তিনি সাদাকা স্বরূপ ছেড়ে যান।
উম্মুল মুমিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট তাঁর স্ত্রীগণ জিহাদের অনুমতি প্রার্থনা
করলে তিনি বললেন, (মহিলাদের জন্য) উত্তম জিহাদ হলো হাজ্জ।
নারীগণ কর্তৃক যুদ্ধে আহতদের সেবা ও শশ্রুষা প্রসংগে রুবাইয়ি‘ বিনতু মআব্বিয (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমরা (যুদ্ধের ময়দানে) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে থেকে লোকেদের পানি পান করাতাম, আহতদের পরিচর্যা করতাম এবং নিহতদের মদিনা্য় পাঠাতাম।’
মহান আল্লাহর পথে যুদ্ধে প্রহরা দান , এ প্রসংগে ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (এক রাতে)
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জেগে কাটান। অতঃপর তিনি যখন মদিনা্য়
এলেন এই আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করলেন যে, আমার সাহাবীদের মধ্যে কোন যোগ্য ব্যক্তি যদি রাতে
আমার পাহারায় থাকত। এমন সময় আমরা অস্ত্রের শব্দ শুনতে পেলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইনি
কে? ব্যক্তিটি বলল, আমি সা‘দ
ইবনু আবূ ওয়াক্কাস, আপনার পাহারার জন্য এসেছি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
ঘুমিয়ে গেলেন। (৭২৩১) (মুসলিম ৪৪/৫ হাঃ ২৪১০, আহমাদ ২৫১৪৭)
মহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ ’’আর যখন তোমরা পৃথিবীতে সফর করবে, তখন তোমাদের কোন গুনাহ হবে না যদি তোমরা সালাত সংক্ষিপ্ত কর, এ আশংকায় যে, কাফিররা তোমাদের জন্য ফিতনা সৃষ্টি করবে। নিশ্চয় কাফিররা হল তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। আর আপনি যখন তাদের মধ্যে থাকেন এবং তাদের সালাত পড়াতে চান, তখন যেন তাদের একদল আপনার সাথে দাঁড়ায় এবং তারা যেন নিজেদের অস্ত্র সাথে রাখে। তারপর যখন তারা সিজদা সম্পন্ন করবে তখন যেন তারা তোমাদের পেছনে অবস্থান নেয়, আর অন্য দল যারা সালাত আদায় করেনি তারা যেন আপনার সাথে সালাত আদায় করে নেয় এবং তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে। কাফিররা চায় যেন তোমরা তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র ও আসবাবপত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও যাতে তারা একযোগে তোমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। যদি তোমরা বৃষ্টির কারণে কষ্ট পাও অথবা যদি তোমরা অসুস্থ হও, এ অবস্থায় নিজেদের অস্ত্র পরিত্যাগ করলে তোমাদের কোন গুনাহ নেই। কিন্তু তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করবে। আল্লাহ্ কাফিরদের জন্য অবশ্যই লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।’’ (সূরাহ্ আন-নিসা ৪/১০১-১০২)
ইমাম আওযায়ী (রহ.) বলেন, যদি অবস্থা এমন হয় যে, বিজয় আসন্ন কিন্তু শত্রুদের ভয়ে সৈন্যদের (জামা’আতে) সালাত আদায় করা সম্ভব নয়, তাহলে সবাই একাকী ইঙ্গিতে সালাত আদায় করবে। আর যদি ইঙ্গিতে আদায় করতে না পার তবে সালাত বিলম্বিত করবে। যে পর্যন্ত না যুদ্ধ শেষ হয় বা তারা নিরাপদ হয়। অতঃপর দু’ রাক’আত সালাত আদায় করবে। যদি (দু’ রাকা’আত) আদায় করতে সক্ষম না হয় তাহলে একটি রুকূ’ ও দু’টি সিজদা্ (এক রাক’আত) আদায় করবে। তাও সম্ভব না হলে শুধু তাক্বীর বলে সালাত শেষ করা জায়িয হবে না বরং নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত সালাত বিলম্ব করবে। মাকহুল ও (রহ.) এ মত পোষণ করতেন। আনাস ইব্নু মালিক (রাযি.) বর্ণনা করেছেন, (একটি যুদ্ধে) ভোরবেলা ভুস্তার দুর্গের উপর আক্রমণ চলছিলো এবং যুদ্ধ প্রচণ্ডরূপ ধারণ করে, ফলে সৈন্যদের সালাত আদায় করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সূর্য উঠার বেশ পরে আমরা সালাত আদায় করেছিলাম। আর আমরা তখন আবূ মূসা (রাযি.)-এর সাথে ছিলাম, পরে সে দূর্গ আমরা জয় করেছিলাম। আনাস ইব্নু মালিক (রাযি.) বলেন, সে সালাতের বিনিময়ে দুনিয়া ও তার সব কিছুতেও আমাকে খুশী করতে পারবে না।
জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খন্দক যুদ্ধের দিন ’উমার (রাযি.) কুরাইশগোত্রের কাফিরদের মন্দ বলতে বলতে আসলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সূর্য প্রায় ডুবে যাচ্ছে, অথচ ’আসরের সালাত আদায় করতে পারিনি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমিও তা এখনও আদায় করতে পারিনি। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি মদিনার বুতহান উপত্যকায় নেমে উযূ করলেন এবং সূর্যাস্তের পর ’আসর সালাত আদায় করলেন, অতঃপর মাগরিবের সালাত আদায় করলেন।
No comments:
Post a Comment